শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক — বাংলার জাতীয় নেতা ও উপমহাদেশের এক বরেণ্য রাজনীতিবিদ। বঙ্গভঙ্গ পরবর্তী নেতৃত্বশূন্য মুসলিম বাংলায়, গোলামির শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তির বার্তা নিয়ে তিনি রাজনীতির ময়দানে অবতীর্ণ হন। বাঙালি মুসলমানের শিক্ষা বিস্তার এবং অর্থনৈতিক দাবি আদায়ের সংগ্রামে শেরেবাংলা ফজলুল হক এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
হিন্দু জমিদার শ্রেণির শোষণের বিরুদ্ধে বাংলার সাধারণ মুসলমান ও নিম্নবর্গের হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করে তিনি গড়ে তোলেন অসাম্প্রদায়িক প্রজা আন্দোলন। “লাঙল যার, জমি তার” — এই স্লোগানকে সামনে রেখে শেরেবাংলার নেতৃত্বে কৃষক-প্রজা পার্টি অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রাদেশিক নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং তিনি বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। প্রজা আন্দোলনের ফলশ্রুতিতেই পরবর্তীকালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ সম্ভব হয়।
রাজনীতিতে সাহসী ও জনদরদী ভূমিকায় তিনি ‘শের-ই-বাংলা’ ও ‘হক সাহেব’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। বাংলার রাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে নিখিল ভারতীয় রাজনীতিতেও মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকারের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন তিনি। ১৯৪০ সালের মুসলিম লীগের অধিবেশনে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের গৌরবও তার।
পাকিস্তান আমলেও পূর্ব বাংলার মানুষের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। দায়িত্বশীল ও জনদরদী এই নেতা ছিলেন বাংলার জাতীয় চেতনার প্রতীক এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অন্যতম রূপকার।
আজ এই মহান নেতার ৬৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শেরে বাংলা ফাউন্ডেশন তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম ছিল, যেখানে নাগরিকরা তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। গত ১৭ বছরে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর বন্দনায় ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে শেরেবাংলার মতো মহান নেতাকে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়েছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজও আগ্রাসন ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ।
এ জাতীয় সংকটকালে, গণতান্ত্রিক ও সভ্যতাভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের অভিযাত্রায় শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক আমাদের জন্য চিরকালীন পথপ্রদর্শক ও মুক্তির দিশারী হয়ে থাকবেন।