২০০৯ সাল থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা, যেটি সাধারণভাবে ‘লিগ্যাল এইড’ নামে পরিচিত, দেশের ১ লাখ ২৭ হাজার ৯৩ জন কারাবন্দিকে সরকারি খরচে আইনি সহায়তা প্রদান করেছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, নিপীড়িত ও বিচারপ্রার্থী জনগণের জন্য পরিচালিত এই কর্মসূচির আওতায় মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ৭ হাজার ৯৯৩ জনে পৌঁছেছে।
প্রথমদিকে জেলা পর্যায়ে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে সেবার বিস্তৃতি হয়েছে সারাদেশে। দেশের ৬৪টি জেলায় স্থাপিত লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আইনি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। শুধু জেলা পর্যায়ে নয়, এই সেবার পরিধি বিস্তৃত হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস থেকে হাজারো মানুষ বিনামূল্যে আইনগত সেবা পেয়েছেন। তাছাড়া রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে চালু করা হয়েছে শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেল, যার মাধ্যমে বহু কারখানা শ্রমিক এবং কর্মজীবী মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রযুক্তিনির্ভর সুবিধা হিসেবে চালু রয়েছে জাতীয় হেল্পলাইন কলসেন্টার, যার টোল-ফ্রি নম্বর ১৬৪৩০—এ ফোন করে জনগণ সহজেই প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছেন।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোর মাধ্যমে সর্বাধিক সংখ্যক নাগরিককে সেবা দেওয়া হয়েছে, যার সংখ্যা ৯ লাখ ৬২ হাজার ৩৮৫ জন। সুপ্রিম কোর্ট থেকে সহায়তা পেয়েছেন ২৮ হাজার ৯৬৫ জন, শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেল থেকে ২৯ হাজার ২৭৪ জন এবং হেল্পলাইন কলসেন্টারের মাধ্যমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৬৯ জন।
জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা ২০০০ সালে প্রণীত ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ অনুসারে গঠিত একটি সরকার-নিয়ন্ত্রিত সেবা প্রতিষ্ঠান। এটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে পরিচালিত হয়। সংস্থাটির মূল লক্ষ্য হলো আর্থিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগণকে বিনা খরচে ন্যায়বিচারের সুযোগ নিশ্চিত করা।
এই কার্যক্রম বাংলাদেশের বিচারপ্রণালীর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা বিচারব্যবস্থাকে আরও মানবিক ও প্রগতিশীল রূপ দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ বিচারপ্রার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে এবং আদালতের দরজাকে সকল শ্রেণির মানুষের জন্য উন্মুক্ত করেছে। ভবিষ্যতে সেবার পরিধি আরও বাড়িয়ে, বিশেষ করে প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থার।