পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ছুটি ও সাপ্তাহিক বন্ধ মিলিয়ে বিরল এক অবকাশের সুযোগ পেয়েছে দেশবাসী। এই সুযোগকে ঘিরে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। ঈদের দিন সকাল থেকেই সৈকতজুড়ে দেখা গেছে হাজারো পর্যটকের আনন্দঘন উপস্থিতি।
সকালবেলা ঈদের নামাজ শেষে পরিবারের সদস্য, বন্ধু কিংবা প্রিয়জনদের সঙ্গে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে ছুটে যান শত শত মানুষ। কেউ এসেছেন ভোলার চর থেকে, কেউ বরিশাল কিংবা ঝালকাঠির শহর থেকে। আনন্দভ্রমণের সেই ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে উপকূলজুড়ে। সৈকতের প্রতিটি প্রান্ত ছিল পর্যটকদের পদচারণায় মুখর।
সৈকতের আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোতেও দেখা গেছে একই চিত্র। লেম্বুর বন, শুঁটকি পল্লি, ঝাউবাগান, গঙ্গামতি কিংবা ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহার- প্রতিটি স্থানেই পর্যটকদের ভিড়। কেউ সাঁতার কাটছেন, কেউ ঢেউয়ের গর্জনে মুগ্ধ, কেউ আবার সূর্যাস্তের লালিমায় হারিয়ে যাচ্ছেন অন্য জগতে। ছোটরা ঘোড়ার গাড়ি, বড়রা ইজিবাইক কিংবা মোটরবাইকে করে সৈকতভ্রমণে মেতে উঠেছেন।
ঝালকাঠি থেকে আসা ভ্রমণপ্রিয় রাকিব রায়হান বলেন, “সকালে বন্ধুদের নিয়ে এসেছি কুয়াকাটায়। সাগরের ঢেউয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। হাসি-আনন্দে সময়টা যেন স্বপ্নের মতো কেটেছে।”
বরিশাল থেকে আসা রিফাত-রিংকি দম্পতি জানান, “আমরা প্রায়ই আসি কুয়াকাটায়। সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত দেখা আমাদের কাছে কখনো পুরনো হয় না। এখানকার পরিবেশ মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।”
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ বলেন, “ঈদের ছুটিকে ঘিরে পর্যটকদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। আগামীকাল (৮ জুন) থেকে আরও বেশি পর্যটক আসবে বলে আশা করছি।”
তবে এমন ভিড়ের মধ্যে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনও রয়েছে সরব। কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, “সৈকতের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি থানা, নৌ ও ডিবি পুলিশও দায়িত্ব পালন করছে। পর্যটকরা যেন নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন- সেটিই আমাদের অগ্রাধিকার।”
ঈদ আনন্দের সঙ্গে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের মেলবন্ধন এবার কুয়াকাটাকে পরিণত করেছে যেন এক স্বপ্নলোকের উৎসবে। এই আনন্দঘন পরিবেশ টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি পর্যটকদেরও সচেতনতা কাম্য।