একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে করা হলো বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন। আর সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতাকে আবার ফেলা হলো প্রশ্নের মুখে। আবারও প্রমাণিত হলো যে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তথ্য নয় বরং গুজব আমলে নিয়েই প্রতিক্রিয়া জানান।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত, উস্কানিমূলক এমন বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন করেন খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস কর্মকর্তা ও তারেকের ঘনিষ্ঠ মুশফিক ফজল আনসারী। প্রত্যাশিতভাবে এসব প্রশ্ন এবং প্রতিক্রিয়া মানবাধিকারের মিথ্যা মামলা করা দল বিএনপিকে আনন্দের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি ডেইলি স্টার প্রধানমন্ত্রীর বেসকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে নিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে হেডলাইনে এমন কিছু লেখা হয় যা তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেননি।
ডেইলি স্টারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, র্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে পুরো সংবাদ সম্মেলনে এমনটি বলেননি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা।
https://www.thedailystar.net/news/bangladesh/diplomacy/news/us-lifting-rab-sanctions-3610341
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এ সফরে তিনি সালমান এফ রহমানের সঙ্গে একটি ডিনারে অংশ নেন। পরে তাঁরা একটি সংবাদ সম্মেলনে আসেন যেখানে জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বৈঠকে কী হয়েছে তা নিয়ে সাংবাদিকরা জানতে চান।
https://www.observerbd.com/news.php?id=472527
ওই সংবাদ সম্মেলনে সালমান এফ রহমান স্পষ্ট ভাবে বলেন যে, মার্কিন বিচার বিভাগ স্বাধীন। তারাই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে কাজ করে। তবে আমরা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য তাদেরকে বলেছি।
এখানে স্পষ্ট যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সরকারের প্রচেষ্টার কথা বলেছেন।
তবে আনসারি তাঁর প্রশ্নে সরাসরি জানতে চান যে র্যাবের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না। আর উদ্বেগজনকভাবে এমন বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের উত্তর দেন মার্কিন পরাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান বেদান্ত প্যাটেল।
তিনি কোনো রকম ফ্যাক্ট চেক না করে উত্তরে বলেন, এমন দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে না। নিষেধাজ্ঞা সমুহ আরোপ করা হয়েছে আচরণ পরিবর্তন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে।
https://unb.com.bd/category/Bangladesh/us-sanctions-against-rab-will-stay-state-department/135745
বার্তা সংস্থা ইউএনবি-র একটি প্রতিবেদনে প্রশ্নটির ত্রুটি উল্লেখ বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের কেউ দাবি করেনি যে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে।
https://unb.com.bd/category/Bangladesh/us-sanctions-against-rab-will-stay-state-department/135745
সাংবাদিকরা বলছেন, আনসারি যা করছেন তা সাংবাদিকতার কাজ না। এর আগেও তিনি মনগড়া, অসত্য তথ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের কাছে প্রশ্ন করেছেন। আর এসব তিনি করেছে তাঁর দল বিএনপির স্বার্থের জন্য। এ জন্য আনসারী বিএনপি নেতাদের কাছ থেকেও সাধুবাদ পাচ্ছেন।
তারা আনসারীকে একজন স্পিন ডাক্তার বলে অভিহিত করেছেন যিনি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ক্ষতি সাধনের জন্য কাজ করে থাকেন। আনসারী ইউটিউবেও একটি রাজনৈতিক শোতে অংশ নিয়ে বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে কৃতিত্ব দেয় না। তিনি বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে মার্কিন সমর্থনের জন্য প্রকাশ্যে বলেছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড লু যেখানে বাংলাদেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের কথা বলছেন সেখানে কীভাবে আনসারীর মতো ব্যক্তিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে রাজনৈতিক প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়।
সম্প্রতি জানা গেছে, বার্তা সংস্থা ইউএনবির নামে ভুয়া সাংবাদিকতা করতেন আনসারী। খালেদা জিয়ার এই সাবেক প্রেস কর্মকর্তা নিজেকে ইউএনবির রাজনৈতিক প্রতিবেদক হিসেবে পরিচয় দিলেও সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, তিনি কখনোই রাজনৈতিক প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেননি। এরপরেও তাঁকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় এবং তিনি প্রশ্নও করার সুযোগ পান।
এর আগেও আনসারী তার অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের অপব্যবহার করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বারবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধানকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। সেইসঙ্গে দলটির সহিংসতাকে তুচ্ছ করে দেখিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ভুল উদ্ধৃতি দিয়েছেন।
https://www.observerbd.com/news.php?id=458260
এদিকে ডেইলি স্টারের সম্পাদকও ২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বৈধতা দিতে কাজ করেছেন। ওই সময় তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন ছাপানোর কথা স্বীকার করেছেন।
https://apnews.com/50428557160e4369bb2237708ffbd8c0