ভালোবাসা কি শুধু কিছু মুহূর্তের অনুভব? নাকি তা সময় ও দূরত্ব পেরিয়েও বেঁচে থাকে চিরকাল? এমনই এক বাস্তব প্রেমকাহিনির সাক্ষী হয়েছে বরগুনা, যেখানে দীর্ঘ ২১ বছর পর ফেসবুকের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া ভালোবাসার মানুষকে ফিরে পেতে সুদূর ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন ডেনিশ নাগরিক রুমানা মারিয়া। আর তাকে বরণ করতে ঢাকায় ছুটে যান প্রেমিক মাহবুবুল আলম মান্নু।
১৯৯৭ সালে ডেনমার্কে পরিচয়, তারপর প্রেম আর বিয়ে—এই গল্প শুরু হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে। জীবিকার তাগিদে ডেনমার্কে পাড়ি জমিয়েছিলেন বরগুনার তরুণ মান্নু। সেখানে এক বন্ধুর ফাস্টফুড দোকানে পরিচয় হয় রুমানা মারিয়ার সঙ্গে। প্রথমে বন্ধুত্ব, পরে প্রেম, এবং একসময় তারা বিয়েও করেন।
স্ত্রীর ইচ্ছায় একই বছর বাংলাদেশে ফিরে বরগুনায় জীবন শুরু করেন এই দম্পতি। ‘আকন ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে দরিদ্র মানুষের সেবায় কাজ শুরু করেন তারা। তবে রাজনৈতিক ও স্থানীয় চাপের কারণে সেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে রুমানাকে বাধ্য হয়ে ডেনমার্কে ফেরত পাঠাতে হয় মান্নুকে। ধীরে ধীরে কমতে থাকে যোগাযোগ, অবশেষে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রুমানা পরে আরেকটি সম্পর্কে জড়ালেও তা টেকেনি।
প্রায় দুই দশক পর, ২০২4 সালের জানুয়ারিতে হঠাৎই ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া মান্নুকে চিনে ফেলেন রুমানা। শুরু হয় কথা, যোগাযোগ, অতীতের স্মৃতিচারণ। অবশেষে ১০ এপ্রিল, মাত্র দশ দিনের ছুটি নিয়ে রুমানা মারিয়া আবার ছুটে আসেন তার ভালোবাসার মানুষের কাছে। ঢাকায় দেখা করে দুজন ফিরে যান বরগুনায়, এবং সেদিনই আসরের নামাজের পর এক লক্ষ টাকা দেনমোহরে পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এই যুগল।
বিয়ে সম্পন্ন হয় মাহবুবুল আলম মান্নুর নিজ বাড়িতে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও বরগুনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্যরা। মান্নু বর্তমানে দৈনিক আমাদের সময়ের বরগুনা প্রতিনিধি এবং রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি।
মান্নু বলেন, “তিন বছর পরেও যখন আমাদের কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখনও বিশ্বাস ছিল, একদিন না একদিন দেখা হবেই। এবার দেখা হলো, আবার ঘর হলো। ডেনমার্কের অ্যাম্বাসির সঙ্গে কথা হয়েছে, ম্যারেজ সার্টিফিকেট জমা দিলে সে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থাকার অনুমতি পাবে। আর যদি আমি তার সঙ্গে ডেনমার্কে যাই, তাতেও তার কোনো আপত্তি নেই।”
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, প্রেম কখনোই হার মানে না সময় বা দূরত্বের কাছে। ভালোবাসার টানে, যেখানে ইচ্ছা, সেখানেই পথ।