
OPEC+ ডিসেম্বরের জন্য ক্রুড তেলের উৎপাদন লক্ষ্য সামান্য বাড়িয়েছে, তবে ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত উৎপাদন বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। পদক্ষেপটি বাজারকে চমকে দেওয়া এবং সম্ভাব্য অতিরিক্ত তেলের ঝুঁকি মোকাবিলার উদ্দেশ্যকে প্রতিফলিত করছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রবিবারের মাসিক বৈঠকে OPEC+’র আটটি দেশ—যেখানে সৌদি আরব ও রাশিয়াও রয়েছে—ডিসেম্বরের জন্য উৎপাদন লক্ষ্য ১ লাখ ৩৭ হাজার ব্যারেল দৈনিক বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এপ্রিল থেকে এই আট দেশের উৎপাদন লক্ষ্য প্রায় ২.৯ মিলিয়ন ব্যারেল দৈনিক বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় ২.৭%।
যদিও তারা ডিসেম্বরের জন্য লক্ষ্য বৃদ্ধি করেছে, তবে ২০২৬ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের জন্য কোনো নতুন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। OPEC+ বলেছে, “ডিসেম্বরের পর, ঋতুবৈচিত্র্যজনিত কারণে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে।” এটি বাজারকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হলেও, আসলে এটি ২০২৬ সালের বিশ্ব তেলের চাহিদা ও সরবরাহের অনিশ্চয়তা মোকাবিলার পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
OPEC এবং আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সির (IEA) ২০২৬ সালের চাহিদা পূর্বাভাসে বড় পার্থক্য রয়েছে। অক্টোবরের মাসিক প্রতিবেদনে OPEC ২০২৬ সালে তেলের চাহিদা ১.৩৮ মিলিয়ন ব্যারেল দৈনিক বৃদ্ধির এবং চাহিদা ও সরবরাহ সমান হতে পারে বলে অনুমান করেছে। অন্যদিকে, IEA ২০২৬ সালের চাহিদা ৭ লাখ ব্যারেল দৈনিক বাড়বে, তবে সরবরাহ বৃদ্ধি হবে এবং ৪ মিলিয়ন ব্যারেল দৈনিক অতিরিক্ত সরবরাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
বেশিরভাগ বাজার বিশ্লেষক OPEC এবং IEA’র মধ্যে অবস্থান নেন; সেপ্টেম্বরের রয়টার্স পোল অনুযায়ী, ২০২৬ সালে বাজারে প্রায় ১.৬ মিলিয়ন ব্যারেল দৈনিক অতিরিক্ত সরবরাহ আশা করা হচ্ছে।
OPEC+’র পদক্ষেপকে অতিরিক্ত সরবরাহ ও সম্ভাব্য মূল্য পতনের ঝুঁকি কমানোর জন্য একটি যৌক্তিক সাবধানী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ভারত ও চীনের ওপর চাপ থাকার কারণে রাশিয়ার তেলের বাজারে প্রভাব কতটা হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্বল্পমেয়াদী সীমিত ক্রয় ছাড়াও রাশিয়ার সরবরাহ শিগগিরই পূর্ণ ক্ষমতায় ফিরে আসবে।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে উভয় সরবরাহ ও চাহিদার অনিশ্চয়তা বিবেচনা করে OPEC+’র সিদ্ধান্তকে একটি নিরাপত্তার বীমা হিসেবেও দেখা হচ্ছে। রাশিয়ার রপ্তানি ক্ষমতা ও নন-OPEC উৎপাদনের ধারাবাহিক বৃদ্ধিই এই বাজারে মূল প্রভাব ফেলছে।