
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ও চীনের উপ–প্রধানমন্ত্রী হে লিফেং আগামী সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় মুখোমুখি বৈঠকে বসবেন। উদ্দেশ্য—দুই দেশের মধ্যে চলমান শুল্ক বৃদ্ধি ঠেকানো এবং বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমিত করা।
ওয়াশিংটন, ১৭ অক্টোবর (রয়টার্স): যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট শুক্রবার জানিয়েছেন, তিনি আগামী সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় চীনের উপ–প্রধানমন্ত্রী হে লিফেং–এর সঙ্গে বৈঠক করবেন, যাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত নতুন শুল্ক বৃদ্ধির আগে উত্তেজনা প্রশমিত করা যায়।
বেসেন্ট হোয়াইট হাউসের মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ ঘোষণা দেন এবং পরে হে লিফেং–এর সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপের পর বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সামাজিক মাধ্যম এক্স–এ তিনি লেখেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য নিয়ে খোলামেলা ও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আগামী সপ্তাহে সরাসরি বৈঠকে আলোচনাটি এগিয়ে নেওয়া হবে।”
চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, দুই পক্ষ “খোলামেলা, গভীর ও গঠনমূলক” আলোচনায় অংশ নিয়েছে এবং দ্রুততম সময়ে নতুন এক দফা বাণিজ্য বৈঠকে সম্মত হয়েছে। গত ছয় মাসে ইউরোপের চারটি শহরে তাদের পূর্ববর্তী আলোচনাগুলোই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্কবিরতি চুক্তির ভিত্তি গড়ে দেয়। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ১০ নভেম্বর।
মালয়েশিয়াকে বৈঠকের স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে কারণ দেশটি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের উভয়ের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। বর্তমানে দেশটির পণ্য ১৯ শতাংশ মার্কিন শুল্কের আওতায় পড়ছে এবং জাতীয় নিরাপত্তা পর্যালোচনার অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ার সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানিতে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকিও রয়েছে।
এর আগে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, বেইজিং সম্প্রতি বিরল–ধাতু ও চৌম্বকীয় উপাদানের রপ্তানিতে যে নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য “অসহনীয়।” তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যদি চীন এসব সীমাবদ্ধতা প্রত্যাহার না করে, তবে ১ নভেম্বর থেকে চীনা আমদানির ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “এটা টেকসই নয়, কিন্তু পরিস্থিতি এমনই। তারা (চীন) আমাকে এটা করতে বাধ্য করেছে।” তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনাও করছে, যা “গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ” করতে পারে।
বিরল–ধাতু বাজারে চীনের আধিপত্য বৈশ্বিক প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খলকে ঝুঁকিতে ফেলছে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন। বেসেন্ট ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার বুধবার চীনের পদক্ষেপকে “বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলের জন্য হুমকি” বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন যে তিনি দুই সপ্তাহ পর দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং–এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ফক্স বিজনেসের “মর্নিংস উইথ মারিয়া” অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা চীনের সঙ্গে ভালো থাকব, তবে চুক্তি অবশ্যই ন্যায্য হতে হবে।”
শুক্রবার দুপুরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের আগে ট্রাম্প বলেন, “চীন আলোচনায় আগ্রহী, আমরাও আলোচনায় আগ্রহী।”
এই ইতিবাচক বার্তা ও আসন্ন শি–ট্রাম্প সাক্ষাতের খবর শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিটে প্রাথমিক পতন ঠেকাতে সহায়তা করে। সপ্তাহজুড়ে শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কা ও আঞ্চলিক ব্যাংকিং খাতে ঋণ উদ্বেগে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন শেয়ারবাজার বিকেলে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়।