রাশিয়ার বেলগোরোড অঞ্চলে একটি বেসামরিক বাড়িতে ইউক্রেনীয় গোলা আঘাতে এক নারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্য গভর্নর ভ্যাচেস্লাভ গ্লাদকভ। ২০২২ সালের পর থেকে সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে বারবার হামলার ঘটনা ঘটছে, যার দায় কিয়েভ অস্বীকার করে আসছে।
শনিবার ভোরে বেলগোরোড শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে নোভি ওবস্কি গ্রামে ১৫৫ মিমি গোলা আঘাত হানে বলে গভর্নর জানান। তিনি টেলিগ্রামে লেখেন, ‘বাড়িটির ছাদ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত; ৬২ বছর বয়সী এক নারী ঘটনাস্থলেই মারা যান। আরও দু’জন আহত, যাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’ রাশিয়ার জরুরি সেবা বিভাগ জানায়, গোলার আঘাতে আশপাশের তিনটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বেলগোরোড ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর এখানে বহুবার গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত জুনে এক হামলায় চার বেসামরিক নিহত হন; জুলাইয়ে আরেক হামলায় ২৪ জন আহত হয়। রাশিয়া প্রতিবারই ইউক্রেনকে দায়ী করলেও কিয়েভ বলে আসছে, ‘আমরা নাগরিক এলাকা লক্ষ্য করি না; রুশ বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ভুল টার্গেটে পড়তে পারে।’
বেলগোরোড অঞ্চলের প্রশাসন শনিবারই তিন গ্রামে ‘জরুরি বিস্ফোরক অপসারণ’ অভিযান শুরু করে এবং স্কুলে অনলাইন ক্লাস ঘোষণা করা হয়েছে। গভর্নর গ্লাদকভ বলেন, ‘আমরা সীমান্তবাসীদের অস্থায়ীভাবে অভ্যন্তরে সরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছি।’ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করে, ‘আমরা ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে পাল্টা গোলাবর্ষণ করেছি, যেখান থেকে গোলা ছোড়া হয়েছিল।’
জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ‘সামরিক লক্ষ্য ছাড়া বেসামরিক এলাকায় গোলাবর্ষণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।’ তবে সংস্থাটি আলাদা করে কোনো পক্ষকে দায়ী করেনি। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রন্ক বলেন, ‘বেলগোরোড রুশ সামরিক সরবরাহ লাইনের গেটওয়ে; ইউক্রেন হয়তো লজিস্টিক চাপ সৃষ্টি করতে সীমান্তবর্তী স্থাপনা লক্ষ্য করছে, কিন্তু তা নাগরিক ক্ষতির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলে, ‘কিয়েভ সন্ত্রাসী কায়দায় বেসামরিকদের টার্গেট করছে; পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা উচিত।’ ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগোর ইগনাত বলেন, ‘আমরা নাগরিক এলাকা আক্রমণ করি না; রুশ বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ভুল টার্গেটে পড়তে পারে অথবা তারা নিজেরাই প্রোপাগান্ডার জন্য হামলা চালাতে পারে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গ্রামগুলোতে বাঙ্কার নির্মাণ চলছে এবং রাতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সীমান্তবর্তী এই সংঘাত আরও বাড়তে পারে, যতদিন না উভয় পক্ষ সামরিক লজিস্টিক লাইন সরিয়ে নাগরিক এলাকা থেকে দূরে রাখার চুক্তি করছে।