
আঙ্কারার আপিল আদালত রবিবার প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (CHP) চেয়ারম্যান ওজগুর ওজেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মামলার রায় এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে তুর্কি রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে; সমালোচকেরা বলছেন, রায়ের ফলাফল দেশটির গণতান্ত্রিক ভারসাম্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুর তথ্য অনুযায়ী, ওজেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ—২০১৪-১৮ সময়ে আঙ্কারা মেয়র থাকাকালীন তিনি পার্টি অর্থে ব্যক্তিগত সম্পত্তি কিনেছেন এবং নির্বাচনী তহবিলে অনুমোদনহীন অর্থ জমা দিয়েছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে পাঁচ বছরের জন্য রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ও সর্বোচ্চ ১১ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। CHP-এর আইনজীবীরা বলেন, “মামলার ভিত্তি দুর্বল; এটি সরকারি কৌশলে বিরোধী কণ্ঠ রোধের অপচেষ্টা”।
CHP-এর এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, গত এক বছরে ওজেলের বিরুদ্ধে এক ডজনের বেশি মামলা দায়ের হয়েছে; এর মধ্যে ৮টিই “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে দলটির ভাষ্য। ২০২৪ সালের স্থানীয় নির্বাচনে CHP ৩৬টি প্রাদেশিক রাজধানীর ৩৫টিতে জয়লাভ করে; প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ানের AKP-এর জন্য এটি ২০০২-এর পর সবচেয়ে বড় নির্বাচনী ধাক্কা। পার্লামেন্টে AKP-এর সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও CHP-এর জনপ্রিয়তা বাড়ায় সরকারি দলের ভিতরে “বিরোধী নেতাকে আইনি পন্থায় দুর্বল করা” ছাড়া বিকল্প কম বলে কূটনীতিক মহলের ধারণা।
আদালতের রায় পিছিয়ে যাওয়ায় রাস্তায় উত্তেজনা ছড়ায়। ইস্তানবুলের টাকসিম স্কয়ারে হাজারো CHP-সমর্থক “Justice for Özel” স্লোগানে বিক্ষোভ করে; পুলিশ জলকামান ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী আইলা ইয়িলমাজ বলেন, “ওজেলের বিরুদ্ধে রায় হলে আমরা রাস্তায় থাকব; গণতন্ত্র এখানেই দাঁড়িয়ে আছে”।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কাজিমিরাস ব্রিজাউস্কাস এক টুইটে বলেন, “তুরস্কে আইনের শাসন ও বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষায় বিরোধী দলের অধিকার নিশ্চিত করতে আহ্বান জানাচ্ছি”। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, “বিচার ব্যবস্থা যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়, সে বিষয়ে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি”।
তুর্কি আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফিলিজ কারাকাস বলেন, “আদালত যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, এটি ২০২১-এর ইস্তানবুল কনভেনশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ‘নারী অধিকার’ ও ‘বিরোধী রাজনীতি’—দুই ক্ষেত্রেই সরকারি দমন-পীড়নের আরেকটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে”। আগামী সপ্তাহে রায় ঘোষণার পর CHP-এর পক্ষ থেকে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে আপিল করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।