আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদকমানোর সম্ভাবনা শি জিনপিং সরকারকে কঠিন সমীকরণের মুখে ফেলেছে। দেশজ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ঋণ-সহজতা আরও বাড়ালে পুঁজিবাজার অতিরঞ্জিত হওয়ার আশঙ্কা; আবার সংকোচনী নীতি ধরে রাখলে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হুমকিতে—এমন দ্বিধায়ই এখন পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবোসি)।
বৃহস্পতিবার শেষে শাংহাই কম্পোজিট সূচক ১.৮% উঠে ৩,২০০ পয়েন্ট অতিক্রম করে গত দেড় বছরের শিখরে। এর পেছনে কারণ, গত দুই সপ্তাহে পিবোসি ১০০ বিলিয়ন ইউয়ানের রিভার্স রিপো চালু এবং ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে ‘মার্জিন লেনদেন’ সীমা শিথিলের নির্দেশ। ফলে দৈনিক লেনদেন গড় ১.১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে, যা গত বছরের সময়ের দ্বিগুণ।
তবে বাজার-উত্তাপ সত্ত্বেও বাস্তব অর্থনীতির চিত্র ফিকে। আগস্টে সিপিআই ০.৩% বার্ষিক উঠেছে—মূল্যস্ফীতি স্বল্প, কিন্তু কারখানা-গেটে উৎপাদক মূল্য (পিপিআই) ১.৮% পতন, যা ১৭ মাসের সর্বনিম্ন। আমদানি-রপ্তানি উভয়ই গত মাসে কমেছে যথাক্রমে ৩.২% ও ৪.১%, বেসরকারি বিনিয়োগ জানুয়ারি-আগস্টে ০.৫% বেড়েছে, যা ২০২০-এর পর সর্বনিম্ন।
এই দ্বৈত চাপে পিবোসির মুদ্রানীতি স্ট্যান্ডিং কমিটি আগামী সোমবার বৈঠকে বসছে। বাজার ধারণা,
– যদি ফেড ২৫ বেসিস পয়েন্ট কাটে, চীন এলএপিআর (লোন প্রাইম রেট) ১০-২০ পয়েন্ট কমানোর পথে যেতে পারে।
– কিন্তু অভ্যন্তরীণ ঋণ-বubble ফের সক্রিয় হওয়ায় পিবোসি ‘টার্গেটেড রিল্যাংডিং’—অর্থাৎ গৃহনির্মাণ ও ক্ষুদ্র-শিল্পে বিশেষ রিফাইন্যান্সিং সুবিধা—বাড়াতে পারে, ব্যাপক রেটকাট না করে।
জেপি মরগান চীনের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাও ঝৌ বলেন, “বিনিয়োগকারীরা ফেড-কাটকে ‘হট মানি’ হিসেবে দেখছে; পিবোসি যদি একই সঙ্গে সম্পূর্ণ রেটকাট করে, তবে ইউয়ান-ডলার স্প্রেড সংকুচিত হয়ে মূলধন আউটফ্লো ঠেকাতে পারে, কিন্তু শেয়ারবাজারের বুদবুদ ফের ফোটার ঝুঁকি আছে।” বাস্তাবতা হলো, চলতি বছর ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির সরকারি লক্ষ্য পূরণে দ্বিতীয়ার্ধে প্রকল্প-ব্যয় বাড়াতে হবে, আর তাতে ঋণ-জিডিপি অনুপাত ইতিমধ্যে ২৮৩%—ঐতিহাসিক শিখর।
অতএব, পিবোসির সামনে তিনটি পথ:
১) কৌশলগত রেটকাট + কঠোর মার্জিন নিয়ন্ত্রণ;
২) রেট অপরিবর্তিত রেখে ব্রড-বেসড ক্রেডিট কোটা শিথিল;
৩) ইউয়ানের স্থানান্তর-ব্যবস্থায় সুদ-সংকোচন, কিন্তু কড়া ব্যাংক-সুপারভিশন।
বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ফেড-কাট ছায়ায় চীন সম্ভবত ‘পথ-১’-এর হালকা সংস্করণ নেবে—অর্থাৎ এলএপিআর ১০ পয়েন্ট কমানো এবং ব্রোকারেজ মার্জিন রেশিও ১০০%-এ বেঁধে দেওয়া—যাতে অর্থনীতিকে টানা যায়, কিন্তু বাজার-উত্তাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।