
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, নাইজেরিয়া খ্রিস্টানদের ওপর হামলা দমন করতে ব্যর্থ হলে তিনি দেশটিতে “দ্রুত ও কঠোর” সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশ দিতে পারেন। শনিবার (১ নভেম্বর) Truth Social-এ পোস্টে ট্রাম্প জানান, তিনি প্রতিরক্ষা বিভাগকে সম্ভাব্য সামরিক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নাইজেরিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সহায়তা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প তার পোস্টে দাবি করেন, নাইজেরিয়ায় ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীরা খ্রিস্টানদের ওপর “নৃশংস হত্যাযজ্ঞ” চালাচ্ছে এবং নাইজেরিয়ার সরকার তা থামাতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি লেখেন, “যদি আমরা আক্রমণ করি, তা হবে দ্রুত, নিষ্ঠুর এবং কার্যকর—যেমনভাবে সন্ত্রাসীরা আমাদের প্রিয় খ্রিস্টানদের ওপর হামলা চালায়।”
তিনি নাইজেরিয়াকে “কলঙ্কিত দেশ” হিসেবে অভিহিত করে সতর্ক করেন, দেশটির সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (Pentagon) এই বিষয়ে মন্তব্য না করে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছে। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “যুদ্ধ বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে। নাইজেরিয়ার সরকার যদি খ্রিস্টানদের রক্ষা না করে, তবে আমরা সেই সন্ত্রাসীদের নির্মূল করব যারা এসব ভয়াবহ অপরাধ করছে।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্য আসে এমন সময়, যখন তার প্রশাসন নাইজেরিয়াকে আবারও “ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনকারী দেশ” হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের Countries of Particular Concern (CPC) তালিকায় যুক্ত করেছে। এই তালিকায় চীন, মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া ও পাকিস্তানের মতো দেশও রয়েছে।
অন্যদিকে, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ টিনুবু ট্রাম্পের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, “নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু বলা বাস্তবতাকে বিকৃত করে। আমাদের সংবিধান সকল ধর্মের নাগরিকদের সমান স্বাধীনতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে।”
তিনি আরও বলেন, সরকার নিয়মিতভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করছে এবং যেকোনো সহিংস উগ্রবাদ দমনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশটি সকল নাগরিককে—জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে—রক্ষা করতে থাকবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিত্র সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে চায়। মন্ত্রণালয় বলেছে, “আমেরিকার মতো আমরাও বৈচিত্র্যকে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে দেখি।”
বর্তমানে পশ্চিম আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি সীমিত। গত বছর প্রায় এক হাজার মার্কিন সেনা নাইজার থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অঞ্চলে কিছু যৌথ মহড়া চললেও আফ্রিকা মহাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি পূর্ব আফ্রিকার জিবুতিতে, যেখানে পাঁচ হাজারের বেশি সেনা অবস্থান করছে।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও নাইজেরিয়াকে “ধর্মীয় উদ্বেগের দেশ” হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিলেন, যা জো বাইডেন প্রশাসন ২০২১ সালে সরিয়ে দেয়।