
মরক্কোর সার্বভৌমত্বের অধীনে পশ্চিম সাহারাকে সীমিত স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার প্রস্তাবকেই সবচেয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) গৃহীত এক প্রস্তাবে পরিষদ মরক্কো ও আলজেরিয়া-সমর্থিত পলিসারিও ফ্রন্টকে আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানায়।
৫০ বছর ধরে চলমান মরক্কো-পলিসারিও বিরোধে নতুন কূটনৈতিক সুর আনল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সর্বশেষ ভোট। যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া করা প্রস্তাবটিতে পশ্চিম সাহারার ভবিষ্যৎ সমাধানের ভিত্তি হিসেবে মরক্কোর ২০০৭ সালের স্বায়ত্তশাসন পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিম সাহারা ব্রিটেনের সমান আয়তনের এক মরুভূমি অঞ্চল, যা ১৯৭৫ সালে স্পেন ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে আফ্রিকার দীর্ঘতম স্থায়ী ভূখণ্ডসংক্রান্ত বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু। মরক্কো অঞ্চলটিকে নিজের অংশ হিসেবে দাবি করে, আর পলিসারিও ফ্রন্ট সেখানে “সাহারাউই প্রজাতন্ত্র” নামে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
প্রস্তাবের পক্ষে ১১টি দেশ ভোট দেয়। রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তান ভোটদানে বিরত থাকে, আর আলজেরিয়া ভোট দেয়নি। প্রস্তাবে জাতিসংঘের পশ্চিম সাহারা শান্তিরক্ষী মিশন (MINURSO)-এর ম্যান্ডেট আরও এক বছরের জন্য নবায়ন করা হয়।
ভোটের পর যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘ দূত মাইক ওয়াল্টজ বলেন, “সব পক্ষকে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আলোচনায় ফিরতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই বছরেই আঞ্চলিক শান্তি সম্ভব।”
আলজেরিয়ার জাতিসংঘ প্রতিনিধি আমার বেঞ্জামা বলেন, “এই প্রস্তাব পলিসারিও ফ্রন্টের প্রস্তাবগুলোকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করেছে। ঔপনিবেশিক শাসনের অধীন জনগণ ছাড়া অন্য কেউ এই ভূখণ্ডের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না।”
ভোটের পর পলিসারিও প্রতিনিধি সিদি ওমর বলেন, এই প্রস্তাবের অর্থ মরক্কোর সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়। পরে এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, “যে কোনো প্রক্রিয়া বা আলোচনায় আমরা অংশ নেব না, যা মরক্কোর সামরিক দখলকে বৈধতা দেয়।”
ভোটের পর মরক্কোর রাজা মোহাম্মদ ষষ্ঠ বলেন, দেশটি “সাহারার মরক্কোত্ব” সুদৃঢ় করার নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। তিনি পলিসারিও নিয়ন্ত্রিত আলজেরিয়ার টিনদুফ শিবিরে অবস্থানরত সাহারাউই শরণার্থীদের স্বায়ত্তশাসন পরিকল্পনাকে সমর্থন করার আহ্বান জানান।
রাজার বক্তব্য, “আমরা এমন একটি সমাধান চাই যা সবার জন্য মর্যাদাপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত।” একই সঙ্গে তিনি আলজেরিয়ার সঙ্গে “ভ্রাতৃসুলভ সংলাপ” পুনরায় শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
ভোটের পর মরক্কোর শহরগুলোয় হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে ও দেশপ্রেমের স্লোগান দিয়ে উদযাপন করে।
মরক্কোর ২০০৭ সালের প্রস্তাব অনুযায়ী, পশ্চিম সাহারায় নির্বাচিত স্থানীয় আইনসভা, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ গঠিত হবে, তবে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও ধর্মীয় বিষয়ে মরক্কো নিয়ন্ত্রণ রাখবে। বিপরীতে, পলিসারিও চায়—একটি গণভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতার প্রশ্নে জনগণের মতামত নেওয়া হোক।
প্রস্তাবে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে ছয় মাসের মধ্যে MINURSO মিশনের ভবিষ্যৎ ম্যান্ডেট নিয়ে কৌশলগত পর্যালোচনা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা আলোচনার অগ্রগতি বিবেচনা করবে।