
এশিয়ার বাজারে বৃহস্পতিবার অপরিশোধিত তেলের দাম আগের দিনের বেশিরভাগ উত্থান ধরে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নেতাদের বাণিজ্য আলোচনা থেকে ইতিবাচক সংকেতের প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা সতর্কভাবে লেনদেন করছে, যদিও বৈঠকের ফলাফল এখনো স্পষ্ট নয়।
এশীয় লেনদেনের শুরুতে ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার ৪ সেন্ট বা ০.০৬% কমে প্রতি ব্যারেল ৬৪.৮৮ ডলারে দাঁড়ায়, আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড ৯ সেন্ট বা ০.১৫% কমে ৬০.৩৯ ডলারে লেনদেন হয়। আগের দিন উভয় সূচকই সামান্য উত্থান দেখিয়েছিল।
বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান এয়ারবেসে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। আলোচনার বিস্তারিত ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন এই বৈঠক বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করবে।
নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসএস ওয়েলথস্ট্রিটের প্রতিষ্ঠাতা সুগন্ধা সচদেবা বলেন, “বাণিজ্য চুক্তির দিকে অগ্রগতি হলে তা বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদা বাড়াবে এবং বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনবে।”
ট্রাম্প বুধবার জানান, চীনের কাছ থেকে ফেন্টানিল তৈরির রাসায়নিক রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে আরোপিত শুল্ক হ্রাস করতে পারে।
অর্থনৈতিক মনোভাব কিছুটা ইতিবাচক রাখতে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সাম্প্রতিক সুদহার কমানোও। রিস্টাড এনার্জির প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্লাউদিও গালিমবার্তি বলেন, “ফেডের সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক কার্যক্রম-নির্ভর পণ্যের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।”
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য সংস্থা (EIA) জানিয়েছে, গত সপ্তাহে দেশটির তেল মজুদ প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে কমেছে। ২৪ অক্টোবর শেষ হওয়া সপ্তাহে অপরিশোধিত তেলের মজুদ ৬.৮৬ মিলিয়ন ব্যারেল কমে দাঁড়িয়েছে ৪১৬ মিলিয়ন ব্যারেলে, যেখানে বিশ্লেষকেরা মাত্র ২১১,০০০ ব্যারেল হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
তবে অক্টোবর মাসজুড়ে ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআই—দুটি সূচকই প্রায় ৩% পতনের পথে রয়েছে, যা পরপর তৃতীয় মাসের ক্ষতি নির্দেশ করে।
আগামী ২ নভেম্বর নির্ধারিত ওপেক+ বৈঠক বিনিয়োগকারীদের নজরে রয়েছে। বৈঠকে ডিসেম্বরের জন্য প্রতিদিন অতিরিক্ত ১ লাখ ৩৭ হাজার ব্যারেল তেল সরবরাহ বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এপ্রিল থেকে সংগঠনটি মোট ২.৭ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন সরবরাহ বাড়িয়েছে, যা বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় ২.৫%।
ট্রাম্প-শি বৈঠকের ফলাফল এবং ওপেক+ এর আসন্ন সিদ্ধান্ত তেলবাজারের স্বল্পমেয়াদি দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যদিও সাম্প্রতিক তথ্য তেলচাহিদা পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেয়, তবুও বিনিয়োগকারীরা বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা ও সরবরাহ বৃদ্ধির ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক রয়েছেন।