
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে টিকে থাকতে মিত্রদের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার, সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল করা এবং নতুন বাজার খোঁজার কৌশল নিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া—বলেছেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়ো হান-কু। এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে স্বাগত জানাচ্ছে সিউল।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর বাণিজ্যিক সহযোগিতা, চীনের সঙ্গে সরবরাহ চেইন স্থিতিশীলতা এবং নতুন বাজারে বৈচিত্র্য আনতে চায় বলে জানিয়েছেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়ো হান-কু।
রয়টার্সকে দেয়া এক লিখিত সাক্ষাৎকারে ইয়ো বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে সময় নয়, বরং আমাদের জাতীয় স্বার্থে পারস্পরিকভাবে লাভজনক একটি চুক্তিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
এই সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং এক উচ্চ-প্রোফাইল কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করছেন—একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশের নেতাদের আতিথ্য দিচ্ছেন তিনি। এপেক সম্মেলনকে ঘিরে সিউল এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দু।
ইয়ো হান-কু বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা যে বাড়তি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, তা বিশ্ব ব্যবসায় নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। তবে এই প্রেক্ষাপটে এপেকের মতো বহুপাক্ষিক সংলাপ ও সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।”
বাণিজ্য বিশ্লেষক এবং ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক বাইঝু চেন বলেন, “দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ছোট এবং নিরাপত্তা অনেকাংশে যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর। ফলে তারা সীমিত সুযোগের মধ্যেই সেরা ফলাফল অর্জনের চেষ্টা করতে পারে।”
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও মার্কিন জোটে অংশগ্রহণের কারণে কিছু কোরিয়ান জাহাজ নির্মাতা বেইজিংয়ের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য ঘাটতি ইস্যুতে চাপও মোকাবিলা করছে সিউল।
ইয়ো জানান, দক্ষিণ কোরিয়া সেমিকন্ডাক্টর, ব্যাটারি, জাহাজ নির্মাণ, বায়োটেক ও পারমাণবিক শক্তি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব গড়তে চায়।
অর্থনৈতিক দিক থেকে, দেশটির তৃতীয় ত্রৈমাসিকে প্রবৃদ্ধি গত দেড় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। প্রযুক্তিপণ্যের চাহিদা রপ্তানি খাতকে টেনে রেখেছে, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কে গাড়ি খাত কিছুটা চাপে পড়েছে। ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিক্রি বাড়ায় সেই ক্ষতি আংশিকভাবে পুষিয়ে গেছে।
এপেক সম্মেলনকে ঘিরে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান এখন সূক্ষ্ম ভারসাম্যের ওপর দাঁড়িয়ে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত জোট, অন্যদিকে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক নির্ভরতা—এই দুই অক্ষে দাঁড়িয়েই সিউল বৈশ্বিক বাণিজ্যে টিকে থাকার নতুন পথ খুঁজছে।