
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য বাণিজ্যচুক্তির আশায় সোমবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে রেকর্ড উত্থান হয়েছে। টোকিওর নিক্কেই সূচক প্রথমবারের মতো ৫০ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করেছে, অন্যদিকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত স্বর্ণ ও বন্ডের দাম কমেছে।
সিঙ্গাপুর থেকে রয়টার্স জানিয়েছে, দুই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকর্তাদের মধ্যে রোববার হওয়া আলোচনায় ট্রাম্প–সি জিনপিং বৈঠকের জন্য একটি বাণিজ্যচুক্তির কাঠামো নির্ধারিত হয়েছে। এই সম্ভাবনা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি নেওয়ার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়, ফলে সোমবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে ব্যাপক উত্থান দেখা যায়।
বাণিজ্যচুক্তি কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপ এবং চীনের বিরল ধাতু রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ স্থগিত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে বিশ্ববাজারে সাম্প্রতিক অনিশ্চয়তা কিছুটা প্রশমিত হতে পারে।
জাপানের নিক্কেই সূচক ২ শতাংশের বেশি বেড়ে ৫০ হাজারের ঐতিহাসিক সীমা ছাড়িয়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি এবং তাইওয়ানের বাজারও একইভাবে উর্ধ্বমুখী হয়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। এমএসসিআই এর এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় সূচক ১.৩ শতাংশ বেড়ে নতুন সর্বোচ্চ স্তরে উঠে আসে।
স্যাক্সোর প্রধান বিনিয়োগ কৌশলবিদ চারু চানানা বলেন, “বিনিয়োগকারীরা এখন দেখতে চান বাণিজ্যবিরতি টিকে থাকে কি না এবং চীনের প্রণোদনা নীতি বাস্তবে প্রবৃদ্ধি বাড়ায় কি না।”
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টক ফিউচার ১ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ফিউচার ০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। কেএ২ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জর্জ বুবোরাস বলেন, “বাজার বুঝে গেছে যে শুল্ক–আলোচনার অনেক মন্তব্যই আসলে রাজনৈতিক নাটক বা শব্দের খেলা মাত্র। এখন গতি ইতিবাচক দিকে।”
অস্ট্রেলিয়ান ডলার ০.৪২ শতাংশ বেড়ে দুই সপ্তাহের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। চীনের ব্লুচিপ সূচক ০.৮৪ শতাংশ এবং হংকংয়ের হ্যাং সেন সূচক ০.৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
অন্যদিকে, স্বর্ণের দাম ১ শতাংশ কমে যায় এবং মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের দাম হ্রাস পেয়ে ১০–বছর মেয়াদি বন্ডের আয় ৩.৮ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে যায়। সয়াবিন, গম ও ভুট্টাসহ কৃষিপণ্যগুলোর দামও বাণিজ্যচুক্তির আশায় বাড়ে।
বিনিয়োগকারীদের নজর এখন জাপান, কানাডা, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকের দিকে। বিশ্লেষকদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাতে পারে, কারণ সেপ্টেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল। তবে সরকার অচলাবস্থার কারণে অর্থনৈতিক তথ্য সংগ্রহে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় কিছু অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
ইয়েনের বিপরীতে ডলার সামান্য শক্তিশালী হয়ে ১৫১.১৩ ইয়েনে লেনদেন হয়েছে, যা দুই সপ্তাহের সর্বোচ্চের কাছাকাছি। ইউরো ১.১৬২১৫ ডলারে স্থিতিশীল থাকে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও জাপানের ব্যাংক এই সপ্তাহে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে নজর থাকবে প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর আয় ঘোষণায়। মাইক্রোসফট, অ্যাপল, অ্যালফাবেট, অ্যামাজন ও মেটা—সবকটি এই সপ্তাহে ত্রৈমাসিক ফলাফল প্রকাশ করবে, যা বৈশ্বিক বাজারে আরও দিকনির্দেশনা দিতে পারে।