
দোহায় কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। সীমান্তে এক সপ্তাহের তীব্র সংঘর্ষের পর এই চুক্তি হলো, যা ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সহিংসতা।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তান রবিবার দোহায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ এক্স (সাবেক টুইটার)–এ লিখেছেন, “যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত হয়েছে।” তিনি জানান, বিস্তারিত আলোচনার জন্য আগামী ২৫ অক্টোবর ইস্তানবুলে উভয় পক্ষ আবারও বৈঠকে বসবে।
তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে বলেন, আলোচনায় দুই পক্ষ “সম্পূর্ণ ও অর্থবহ যুদ্ধবিরতিতে” একমত হয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবারের আলোচনায় কাতার ও তুরস্ক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে, এবং পরবর্তী বৈঠকগুলোর উদ্দেশ্য হবে যুদ্ধবিরতির টেকসই বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
গত সপ্তাহে দুই দেশের সীমান্তে তীব্র লড়াইয়ে ডজনখানেক মানুষ নিহত ও শতাধিক আহত হয়। পাকিস্তান দাবি করেছে, আফগান ভূখণ্ডে অবস্থানরত জঙ্গিরা পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে এবং কাবুলকে এসব গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। অন্যদিকে তালেবান সরকার বলেছে, পাকিস্তান ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে এবং আফগানিস্তানের অস্থিতিশীলতা বাড়াতে ইসলামিক স্টেট–ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে।
এই সংঘাতের সূত্রপাত হয় পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী আফগান মাটিতে আশ্রয় নেওয়া জঙ্গিদের হামলার পর। এর জবাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সীমান্তজুড়ে বিমান হামলা চালায়। শুক্রবার এক আত্মঘাতী হামলায় সাত পাকিস্তানি সৈন্য নিহত ও ১৩ জন আহত হন বলে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শনিবার পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির কেডেটদের উদ্দেশে বলেন, “আফগান সরকারকে অবশ্যই সেই প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে যারা আফগান মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানে সন্ত্রাস চালাচ্ছে।”
তালেবান মুখপাত্র জানান, দোহা বৈঠকে উভয় দেশ একমত হয়েছে যে “কোনো পক্ষ অন্য দেশের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক পদক্ষেপ নেবে না এবং পাকিস্তানবিরোধী কোনো গোষ্ঠীকে সমর্থন দেওয়া হবে না।”
তবে আফগান মুখপাত্র মুজাহিদ অভিযোগ করেছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও পাকিস্তান আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে, যাতে বেসামরিক লোকজন নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, কাবুল প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করছে, যদিও আলোচনা সম্মান জানাতে তালেবান যোদ্ধাদের প্রতিক্রিয়া না জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার পর আফগানিস্তান আগামী মাসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য টি–টোয়েন্টি ত্রিদেশীয় ক্রিকেট সিরিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড জানিয়েছে, পাকতিকা প্রদেশে সামরিক হামলায় তিনজন স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।