
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় সরকারি জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ ও বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত হলেন রনগোপালদী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোশারেফ হোসেন। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, তিনি জেলেদের প্রাপ্য চালের একটি অংশ বিক্রি করেছেন এবং বাকি চালের কিছু অংশ আত্মসাৎ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মা ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার ঘোষিত কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। রনগোপালদী ইউনিয়নের ২,২৭০ জন জেলের জন্য চাল বিতরণের দায়িত্ব ছিল প্যানেল চেয়ারম্যান মো. অলিউল ইসলাম রুবেলের তত্ত্বাবধানে।
রবিবার সকাল ১০টার দিকে ওয়ার্ডভিত্তিকভাবে ইউপি সদস্যদের মধ্যে চাল বণ্টন করা হয়। এর মধ্যে মোশারেফ হোসেনের কাছে ৩১০ জন জেলের জন্য মোট ১৫৫ বস্তা চাল হস্তান্তর করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি এর মধ্যে ১৪ বস্তা (২৮ জনের চাল) আত্মসাৎ করেন এবং আরও ৯ বস্তা (১৮ জনের চাল) “কেরিং খরচের” অজুহাতে বিক্রি করেন। স্থানীয়দের হাতে বিষয়টি ধরা পড়লে তিনি সাংবাদিক ও এলাকাবাসীকে টাকা ও সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রিকশাচালক জালাল বলেন, “মোশারেফ মেম্বার আর বারেক ফকির আমাকে ৬ বস্তা চাল দেন বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে। ডালি বাড়িতে তিন বস্তা দিতে বলেন, বাকিটা ফকির বাড়িতে রাখতে বলেন।”
আরেক স্থানীয় বারেক মিয়া জানান, “অনেকে চাল নিতে আসে না, তাই মেম্বার সাহেব কিছু চাল আমার বাড়িতে রাখতে বলেন।”
অভিযোগের বিষয়ে মোশারেফ হোসেন বলেন, “চাল বিতরণের সময় প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কেরিং খরচ কেউ দেয় না, তাই ৬ বস্তা চাল বিক্রি করেছি। পিআইও আর চেয়ারম্যানও ভাগ পায়।”
তবে প্যানেল চেয়ারম্যান অলিউল ইসলাম রুবেল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ইউপি সদস্যদের চাল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং কেরিং খরচ বাবদ টাকা প্রদান করা হয়েছে। কেউ চাল বিক্রি করে থাকলে ইউএনও মহোদয়কে জানানো হবে।”
সমাজসেবা কর্মকর্তা ও ট্যাগ অফিসার মুশফিকুর রহমান বলেন, “ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানি না। সত্যতা মিললে ইউএনওকে জানাব।”
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মিঠুন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, “কেরিং খরচের টাকা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে, পিআইও অফিসের নয়। ইউপি সদস্যের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরতিজা হাসান বলেন, “জেলেদের চাল বিক্রির অভিযোগ পেয়েছি। কেউ সরকারি চাল আত্মসাৎ করলে বা অনিয়ম করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”