
ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ আয়োজনে সোমবার শুরু হওয়া “টু-স্টেট সলিউশন সামিট”-এ ইউরোপ-আরব-আফ্রিকার প্রায় ৭০টি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান একত্রিত হয়েছেন; ইতিমধ্যে স্পেন, বেলজিয়াম, নরওয়ে ও স্লোভেনিয়া সহ অন্তত ১২টি দেশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, যা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁখোঁ বৈঠকের উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, “১৯৬৭-পূর্ব সীমান্তের ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেম রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।” সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান যোগ করেন, “আমরা আন্তর্জাতিক আইন ও আরব শান্তি উদ্যোগকে পুনরায় সক্রিয় করতে চাই—আজকের সম্মেলন শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবায়নের পথনকশা তৈরি করবে।”
সম্মেলনের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক উচ্চপ্রতিনিধি কাজিমির মিচেলস্কি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ইইউ-র ২৭ সদস্যর মধ্যে অন্তত ১৫টি দেশ “সমন্বিত স্বীকৃতি” দেওয়ার সময়সূচি নির্ধারণে কাজ করছে। তিনি বলেন, “আমরা ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার—উভয়কেই সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে শীর্ষ সম্মেলনকে “পরিত্যক্ত বহুপাক্ষিক থিয়েটার” আখ্যা দিয়ে বলেন, “একতরফা স্বীকৃতি হামাসকে আরও উসকে দেবে এবং সন্ত্রাসকে বৈধতা দেবে।” যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, ওয়াশিংটন এখনও “সরাসরি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রসমূহের স্বীকৃতি” সমর্থন করে; “একপক্ষীয় পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদি সমাধানকে জটিল করবে” বলে তিনি সতর্ক করেন।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সম্মেলনে ভিডিও বার্তায় বলেন, “আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদের অধিকার, আপোষ নয়।” তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে “নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো না দেওয়ার” আহ্বান জানান এবং ২০২৬ সালের মধ্যে পূর্ণ সদস্যপদ লাভের লক্ষ্য ঘোষণা করেন।
সম্মেলনে উপস্থিত জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস সাংবাদিকদের বলেন, “গাজায় মানবিক বিপর্যয় ও পশ্চিম তীরে সহিংসতা বেড়েই চলেছে; আমরা এখনই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পুনরায় চালু না করলে দুই-রাষ্ট্র সমাধান আরও কঠিন হয়ে পড়ব।” তিনি ১০০-দিনের “জরুরি শান্তি রোডম্যাপ” প্রস্তাব তুলে ধরেন, যার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন আন্তর্জাতিক সুরক্ষা বাহিনী মোতায়েন, গাজা পুনর্গঠন তহবিল গঠন ও ১৯৬৭-পূর্ব সীমান্তে ফেরত যাওয়ার জন্য পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আগামীকাল সম্মেলনের সমাপনী ঘোষণাপত্রে “স্বীকৃতির সমন্বয়, অর্থনৈতিক সহায়তা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা” তিনটি মূল স্তম্ভ উল্লেখ থাকবে বলে ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে। তবে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বহুপাক্ষিক চাপে টেল আভিভকে আবারও আলোচনায় ফিরতে হতে পারে।