সিউল, ২৩ সেপ্টেম্বর — দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষ আদালত সোমবার রাতে ইউনিফিকেশন চার্চের বর্তমান নেত্রী হান হাক-জার (৮০) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদনের শুনানি করেছেন; তাঁকে সাময়িকভাবে আটকের অনুমোদন পেলে সংস্থাটির নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও অর্থপ্রবাহ নিয়ে চলা তদন্তে বড় মোড় নেবে বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র নিশ্চিত করেছে।
প্রসিকিউটররা জানান, হান হাক-জা ২০২২-২৪ সময়কালে বিভিন্ন ব্যবসায়িক চুক্তির আড়ালে তহবিল স্থানান্তর এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগে “বিশেষ অর্থপাচার ও জালিয়াতি” ধারায় তদন্তাধীন। একই মামলায় প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইয়লের স্ত্রী কিম কেওন-হি’র একটি বেসরকারি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ৩.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদান লেনদেনের সূত্র ধরে তদন্তকারী দল হানের ভূমিকা খতিয়ে দেখছেন।
আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা হয় সিউল সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট প্রসিকিউশনের জ্যেষ্ঠ তদন্তকারী পার্ক মিন-জুর। তিনি বলেন, “আমরা হান হাক-জার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও সাক্ষী জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা পেতে আটকের প্রয়োজনীয়তা উপস্থাপন করেছি; আদালত আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রায় দেবেন।”
ইউনিফিকেশন চার্চ—যা সরকারি নথিতে “সাধারণ নাম” হিসেবে “হেভেনলি মাদার অ্যাফেয়ার্স” নামে নিবন্ধিত—১৯৫৪ সালে সান মিয়ুং মুন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালে মুনের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী হান হাক-জা সংস্থার ধর্মীয় ও ব্যবসায়িক অংশের নিয়ন্ত্রণ নেন। দক্ষিণ কোরিয়ার কর সংগ্রহ সংস্থা (NTS) এর আগে ২০২৩ সালে সংস্থাটির অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান দু’টির বিরুদ্ধে ১৯.৪ বিলিয়ন উৎসে কর ফাঁকি ধরিয়ে দেয়; সেই মামলা এখনও আপিলাধীন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইয়লকে গত ডিসেম্বরে সংসদ অপসারণের পর দেশটির কনজারভেটিভ শিবিরে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রেক্ষাপটে তাঁর স্ত্রীর ফাউন্ডেশনের অর্থায়ন উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি “অনুচিত প্রভাব” অভিযোগ তুলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের চাপ সৃষ্টি করে। প্রসিকিউটররা বলছেন, হানের মামলা “ধর্মীয় সংস্থা ও রাজনৈতিক অঙ্গনের অপব্যবহার” রোধে সরকারের “জিরো-টলারেন্স” নীতির অংশ।
আদালতের বাইরে সোমবার সন্ধ্যায় ইউনিফিকেশন চার্চের একদল সমর্থক “ধর্মীয় স্বাধীনতা” স্লোগান দেন; অন্যদিকে নাগরিক সমাজ গোষ্ঠী “পিপলস সলিডারিটি” বিক্ষোভ করে হানের গ্রেপ্তার দাবি করে। পুলিশ দু’পক্ষকে আলাদা করে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখে।
আদালতের রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত হান হাক-জা সিউল ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছেন। তাঁর আইনজীবী চোই ইয়ং-সু বলেন, “মক্কেল নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন এবং আমরা জামিনের আবেদন করব।” তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, প্রয়োজনে আগামী সপ্তাহে সাবেক ফার্স্ট লেডি কিম কেওন-হিকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হতে পারে।