ক্যারিবীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক এফ-৩৫ লাইটনিং-II স্টেলথ যুদ্ধবিমান পুয়ের্তো রিকোর রুজভেল্ট রোডস নৌ-ঘাঁটিতে অবতরণ করিয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বিমানগুলোর উপস্থিতি নিয়ে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের ধারণা, এটি ভেনেজুয়েলার প্রতি কৌশলগত শক্তি প্রদর্শনের অংশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, অন্তত ছয়টি এফ-৩৫ ‘এ’ ভেরিয়্যান্ট বিমান পূর্ব ক্যারিবিয়ানের এই মার্কিন অঞ্চলে অবতরণ করছে। মার্কিন দক্ষিণ কমান্ড (SOUTHCOM) এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বিমান প্রেরণের কারণ নিশ্চিত করেনি; তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহে ভেনেজুয়েলা-গায়ানা সীমান্তে তেলসমৃদ্ধ এসেকুইবো অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
পেন্টাগনের একজেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেন, “আমরা অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। প্রয়োজনে আমাদের দ্রুত উপস্থিতি জোরদার করার সক্ষমতা আছে।” কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ওয়াশিংটন ইতিমধ্যে ব্রাজিল ও কলম্বিয়ার সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় বাড়িয়েছে এবং ক্যারিবিয়ান সাগরে নৌমহড়ার সময়সূচিও এগিয়ে এনেছে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো গত সপ্তাহে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দাবি করেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনায় গায়ানা আমাদের জলসীমা লঙ্ঘন করছে।” কারাকাস ইতিমধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় সামরিক মহড়া শুরু করেছে এবং রেসার্ভ বাহিনীর ড্রিল আদেশ দিয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রদূত জোর্জ আররেআজা শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ করেন, “আমরা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অধিকার রাখি।”
অন্যদিকে, গায়ানার প্রেসিডেন্ট ইরফান আলি রয়টার্সকে বলেন, “আমরা কূটনৈতিক সমাধানে বিশ্বাসী, কিন্তু আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।” দেশটি সম্প্রতি ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ‘এইচএমএস ট্রেন্ট’ জাহাজ কিছুদিনের জন্য কোস্টগার্ড প্রশিক্ষণের নামে ভাড়া করেছে, যা আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
পুয়ের্তো রিকোর স্থানীয় বাসিন্দা কার্লোস মেন্ডোজা ফেসবুক লাইভে বলেন, “আমরা বিমানগুলো নামতে দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম ঝড়ের জন্য জরুরি অবতরণ। পরে বুঝলাম এটি সামরিক মোতায়েন।” রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ক্রিস্টিনা গোমেজ মন্তব্য করেন, “এফ-৩৫-এর উপস্থিতি শুধু প্রযুক্তিগত শক্তি নয়, বার্তাও—যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত হস্তক্ষেপের সক্ষমতা রাখে।”
এদিকে, ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি (CARICOM) শনিবার এক বিবৃতিতে উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং মেক্সিকোর প্রস্তাবিত মধ্যস্থতা বৈঠকের তারিখ আগামী সপ্তাহে নির্ধারণ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, “আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান সমর্থন করি, তবে আমাদের নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”