ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী ৩ সেপ্টেম্বর কিয়েভে রাশিয়ার বিমান হামলা প্রতিহত করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার সতর্কতার পর দেশব্যাপী বিমান হামলার সতর্কতা জারি করা হয়। কিয়েভের সামরিক প্রশাসন বাসিন্দাদের নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয়ে থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
কিয়েভ, ৩ সেপ্টেম্বর: রাশিয়া মঙ্গলবার রাতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বিমান হামলা শুরু করে, যার ফলে শহরজুড়ে বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। কিয়েভের সামরিক প্রশাসন জানিয়েছে, “বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী কিয়েভে কাজ করছে! সব পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয়ে থাকুন!” এই হামলার সময় ইউক্রেনের বিমান বাহিনী সতর্ক করে যে, রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছে।
একই দিনে রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়, যার ফলে কিয়েভ ছাড়াও লভিভ, ভলিনসহ নয়টি অঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইউক্রেনের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, হামলায় কিরোভোহরাদ অঞ্চলে চারজন রেল কর্মী আহত হয়েছেন এবং রেল সুবিধার ক্ষতি হওয়ায় বেশ কয়েকটি ট্রেন পরিষেবা বিলম্বিত হয়েছে। এছাড়া, জ্নামিয়াঙ্কা সম্প্রদায়ে পাঁচজন আহত এবং ২৮টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে।
ইউক্রেনের পশ্চিম প্রতিবেশী এবং ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় তাদের নিজস্ব এবং মিত্র বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিট সক্রিয় করে। পোল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল কমান্ড একটি পোস্টে জানায়, “রাশিয়ান ফেডারেশন ইউক্রেনের ভূখণ্ডে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তুতে আবারও হামলা চালাচ্ছে।”
এই হামলা এমন সময়ে ঘটেছে যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একটি সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নিচ্ছেন, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উদযাপনের অংশ। এই ঘটনা চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য ত্রিপক্ষীয় জোটের প্রেক্ষাপটে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “রাশিয়া শান্তির পরিবর্তে বারবার বলিস্টিক হামলা বেছে নিচ্ছে।” তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শাহেদ ড্রোন ব্যবহার বাড়িয়েছে, যা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১,০০০ ড্রোন হামলায় পৌঁছেছে। এই হামলাগুলো ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চাপে ফেলছে এবং বেসামরিক অবকাঠামোর ক্ষতি করছে। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার এবং আশ্রয়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই হামলা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের তীব্রতা এবং শান্তি আলোচনার অগ্রগতির অভাবের প্রমাণ। গত কয়েক সপ্তাহে মস্কো এবং কিয়েভের মধ্যে দুই দফা সরাসরি শান্তি আলোচনা হলেও, বন্দী বিনিময় ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইউক্রেন এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার উপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে এবং শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে আরও নিষেধাজ্ঞা এবং সামরিক সহায়তার দাবি জানাচ্ছে।