৫ এপ্রিল শনিবার, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ও বড় বড় শহরগুলোতে লক্ষাধিক মানুষ রাস্তায় নেমে আসে “হ্যান্ডস অফ” আন্দোলনের ব্যানারে—যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দায়িত্বকাল শুরুর পর এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, পোর্টল্যান্ডসহ প্রায় ১২০০টিরও বেশি স্থানে একযোগে এ প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদকারীরা মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের Project 2025 নামক রক্ষণশীল নীতিমালার আওতায় প্রস্তাবিত নির্বাহী আদেশ, সরকারি কর্মচারী ছাঁটাই, ও কঠোর অভিবাসন নীতির বিরোধিতা করে বিক্ষোভে অংশ নেন। ওয়াশিংটনে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ওয়াশিংটন মনুমেন্টের সামনে জড়ো হয়ে শ্লোগান তোলেন—“Hands off our rights!” এবং “No to MAGA chaos!”। কেউ কেউ ইউক্রেনের পতাকা ও ফিলিস্তিনি কেফিয়েহ পরে ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতির বিরোধিতা প্রকাশ করেন।
শিকাগো শহরের লুপ এলাকায় শত শত মানুষ মিছিল করে Project 2025-এর আওতায় সরকারি চাকরি হ্রাস ও বিভিন্ন এজেন্সি বিলুপ্তির পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানান। পোর্টল্যান্ডেও অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে জনতার ঢল নামে। AP-এর খবরে বলা হয়, পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং বড় কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
এই বিক্ষোভে শ্রমিক সংগঠন, নাগরিক অধিকার গ্রুপ, প্রগ্রেসিভ অ্যাক্টিভিস্টরা মিলিতভাবে অংশ নেন। Indivisible-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা Ezra Levin বলেন, “এই আন্দোলন শুরু মাত্র—এটি জনগণের জাগরণ।”
১ এপ্রিল ট্রাম্প কর্তৃক ঘোষিত ‘Liberation Day’ ট্যারিফ নীতির ফলে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে ধস নামে এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়ে যায়। পাশাপাশি ‘Department of Government Efficiency’-এর অনানুষ্ঠানিক প্রধান ইলন মাস্কের নেতৃত্বে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষোভকারীরা ‘Musk Off, Hands Off’ এবং ‘No Billionaire Takeover’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসব সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন এই প্রতিবাদকে “উগ্র বামদের চিৎকার” বলে অভিহিত করেছে। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান, “প্রেসিডেন্ট আমেরিকানদের জন্য কাজ করছেন, কয়েকজন চিৎকারকারীকে সন্তুষ্ট করার জন্য নয়।” তবে Reuters/Ipsos জরিপে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থন হার ৪৩ শতাংশে নেমে এসেছে—যা জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন।
‘হ্যান্ডস অফ’ আন্দোলন মার্কিন রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। সংগঠকরা জানিয়েছেন, এটাই কেবল শুরু। সামনের দিনগুলোতে নাগরিক অধিকার, গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের পক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবাদ চলবে। আন্দোলনের স্লোগান-ভেজা ব্যানারগুলোই যেন ঘোষণা দিচ্ছে: “আমরা থামবো না।”