ঢাকা: সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের ওপর ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণের বোঝা রেখে গেছে। এসব ঋণের বেশিরভাগই নেওয়া হয়েছে দেশি উৎস থেকে, বিশেষ করে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা, ট্রেজারি বিল এবং বন্ড থেকে। বর্তমানে, অন্তর্বর্তী সরকারকে এই বিপুল ঋণের বোঝা সামলাতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের ধারণা, চলতি বছরের জুন শেষে এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে দেশি ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা, আর বিদেশি ঋণ ৮ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনার অভাব এবং কর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতা এই ঋণ বৃদ্ধির মূল কারণ। কর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় সরকারকে অতিরিক্ত ঋণ নিতে হয়েছে। এর ফলে ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “দেশি ও বিদেশি দুই ধরনের ঋণই আগের সরকারের সময়ে দ্রুত হারে বেড়েছে। কিন্তু এত বিপুল ঋণ নেওয়ার পর এখন ঋণের কিস্তি এবং সুদ পরিশোধের যে চাপ পড়ছে, তা সামলানো কঠিন হবে।”
বর্তমান সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ। রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে বাজেটেও বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে, যা অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের পুঞ্জীভূত বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৯০ কোটি মার্কিন ডলার, যা টাকায় হিসাব করলে ৮ লাখ ১ হাজার কোটি টাকার সমান। ফলে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মাথার ওপর গড়ে ৪০০ ডলারের মতো ঋণের বোঝা রয়েছে।
সামনের দিনগুলোতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে আরও চাপ বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়ে বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “বাংলাদেশকে অর্থ দিতে অনেকেই আগ্রহী। কিন্তু ঋণ নেওয়ার সময় শর্তগুলো যাচাই–বাছাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, ঢালাও ঋণ নিয়ে আফ্রিকার অনেক দেশের করুণ পরিণতি আমরা দেখেছি।”
দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে বিদেশি ঋণ গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে, যেন বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত না হয়।