এক মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অচলাবস্থা কাটল। কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার পর আজ শনিবার (১১ মে) বুয়েটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ছাত্র রাজনীতি নিয়ে মার্চের শেষের দিকে বুয়েটে শুরু হয় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন। গত ২৮ মার্চ ছাত্রলীগের সভাপতি বুয়েটে প্রবেশ করে ছাত্রলীগের কমিটি দিচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়। এ সময় ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। সেইসঙ্গে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ বহালের দাবিও জানান আন্দোলনকারীরা। শেষমেশ আন্দোলনের বিষয়টি গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। যেখানে উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা নেই।
অবশ্য সম্প্রতি বুয়েটে শিবিরের কমিটি প্রদানের তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন বুয়েট প্রশাসন। সেই সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনকারীরা এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন দাবিদাওয়া পেশ করেনি।
ছাত্র রাজনীতি প্রসঙ্গে আদালতের দেয়া রায়ের বিষয় ঈদের ছুটির আগেই বুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার আইনি লড়াইয়ে যাবার ঘোষণা দেন। সেই সঙ্গে আইনজীবী নিয়োগ, আইনি লড়াইয়ের প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিতে সরাসরি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণসহ সকল বিষয়েই ইতিবাচক মন্তব্য করেন তিনি। এরপরেও একদল শিক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন।
এদিকে আদালতের বিষয়টি পুরোপুরি সমাধান না হলেও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়ার পর বুয়েটের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসতে রাজি হন। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠকের পর ১১ তারিখ থেকে পরীক্ষার সূচি পুননির্ধারণ করা হয়। যা অনুষ্ঠিত হলো।
এদিকে বুয়েটে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী আপত্তি জানালেও জামাতে ইসলামের উগ্রবাদী সংগঠন শিবিরের রাজনীতি নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
সম্প্রতি বুয়েট শিবিরের একটি কমিটি প্রকাশিত হয়েছে। এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম। যিনি এখন জামায়াতের ঢাকা দক্ষিণ শাখার সেক্রেটারি এবং কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য।
জানা গেছে, বুয়েটে শিবিরের ছাত্র ইউনিটের নেতৃত্বে রয়েছেন আলী আম্মার মোয়াজ (সভাপতি), মো. মঈনুদ্দিন (সম্পাদক), ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক পদে আছেন মাহমুদ আকন, সহ-প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার হাসান, প্রকাশনা সম্পাদক ফয়সাল হাবিব, সাহিত্য সম্পাদক আল ফারাবী, বায়তুল মাল সম্পাদক দায়িত্বে আছেন আফিফ আনোয়ার এবং শাহ মোস্তাফা রেজা আছেন কোচিং পরিচালক পদে। পুরো বুয়েট ক্যাম্পাস দুটি থানায় পড়ায় উভয় ইউনিটের কার্যক্রম তদারকি করার জন্য কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক রয়েছে। এই ইউনিটে রয়েছেন ফাহাদুল ইসলাম (থানা শাখার সভাপতি) এমএ মোসাব্বির অন্তর (থানা শাখার সম্পাদক) এবং এমাদ আল মাহাদী (থানা শাখার সভাপতি)।
তবে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বড় আকারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও গত বছরের জুন মাসে একটি প্রত্যন্ত হাওর এলাকায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয় শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বুয়েটের ২৪ জন শিক্ষার্থী। তৎকালীন সময়ে সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হাসান আবেদ জানান, গ্রেপ্তার মধ্যে কয়েকজন শিবিরকর্মী রয়েছে।
গত বছর টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেপ্তার হওয়াদের একজন শিবিরের বুয়েট শাখার সম্পাদক ও ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. মঈনুদ্দিন বুয়েটের সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন। শিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক ও ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফয়সাল হাবিবও আটক হন টাঙ্গুয়ার হাওরে। টাঙ্গুয়ার হাওরে আটক হওয়াদের তালিকায় আরও আছেন বুয়েট কেন্দ্রিক একটি থানা শাখার সভাপতি ও ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহাদুল ইসলাম এবং ১৮তম ব্যাচের এমএমই বিভাগের শির্ক্ষাথী ও বুয়েট শিবিরের বায়তুল মাল পদে (অর্থ সম্পাদক) থাকা আফিফ আনোয়ার।
জানা গেছে, বুয়েটে শিবিরের একটি নেটওয়ার্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাশকতামূলক কার্যকলাপে প্ররোচিত করা, ধর্মের মিথ্যা ব্যাখ্যা ছড়ানো সহ আরও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেইসঙ্গে উগ্রবাদী মতামতের বিরুদ্ধে কথা বলা ছাত্রদের র্যাগিং করছে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে। বুয়েট শিবিরের কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পদাক সহ একজন ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদকও রয়েছেন যারা ক্যাম্পাস ও কেন্দ্রীয় শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে সামগ্রিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধায়ন করেন। তবে এই তালিকার বাহিরে থেকেও শিবির কর্মী হিসেবে পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন আরও কিছু বুয়েট শিক্ষার্থী, যাদের মূললক্ষ্য বুয়েট শিক্ষার্থীদের শিবিরের কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট করা এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে উগ্রবাদী চেতনার বিকাশ ঘটানো।