
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সউদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সালমানকে ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থেকে বাঁচিয়ে মানবাধিকার নীতিতে একটি বড় রূপান্তর প্রদর্শন করেছেন। ট্রাম্পের এই অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যগত মানবাধিকার নীতির বিপরীতমুখী এবং বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে।
নভেম্বরের মাঝামাঝি, ট্রাম্প সউদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সালমানকে সোজাসুজি বলেছিলেন, তিনি খাশোগির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে “কিছুই জানতেন না,” যা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ২০২১ সালের প্রতিবেদনের সরাসরি বিপরীত বিবৃতি। ওই প্রতিবেদন বলেছিল যে যুবরাজ এই হত্যাকাণ্ড অনুমোদন করেছিলেন এবং খাশোগিকে রাজ্যের বিরুদ্ধে হুমকি হিসেবে দেখেছিলেন। তবুও, ট্রাম্পের দাবি যুবরাজের প্রতি আন্তর্জাতিক সমালোচনার মাত্রাকে কমিয়ে দিয়েছে এবং তার প্রশাসনের মানবাধিকার নীতিতে ট্রাম্পের ভূমিকা স্পষ্ট করেছে।
ট্রাম্পের প্রশাসন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে যথেষ্ট তৎপর নয়, বরং তাদের পদক্ষেপগুলো বেশিরভাগই ছিল এক ধরনের লেনদেনমূলক কূটনীতি যা অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করে। এর ফলে সউদি আরবের মতো দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক আরো মজবুত করার চেষ্টা করা হয়েছে, যেখানে বিশাল অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা ফোকাসে।
এই নীতি পরিবর্তনের পেছনে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক দর্শন এবং বিশ্বনেতাদের সাথে তাঁর প্রাত্যহিক আন্তঃক্রিয়া একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে, যাকে অনেক সমালোচক স্বৈরাচারশাসক ও ক্ষমতাবান নেতাদের প্রতি সহানুভূতি হিসেবে দেখেন। তুরস্ক ও হাঙ্গেরি থেকে শুরু করে চীন ও এল সালভাদর পর্যন্ত স্বৈরাচারশাসক নেতাদের প্রতি ট্রাম্প প্রশংসা করেছেন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো নিয়ে কঠোর সুর অবলম্বন করেননি।
বাইরের সমালোচনার প্রতিবাদে হোয়াইট হাউস মুখপাত্র বলেছেন, “কেউ ট্রাম্পের মত মানবাধিক্যের বিষয়টি নিয়ে যত্নশীল নয়।” তবে মানবাধিকার সংস্থা ও কিছু রাজনীতিবিদ ট্রাম্প প্রশাসনের এই অবস্থানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের অধিকার রক্ষার ঐতিহ্যকে ক্ষুন্ন করার অভিযোগ করেছেন। সঞ্চালিত রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন মানবাধিকার নীতির পরিবর্তনটি এক অনিশ্চিত পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে রাজনৈতিক স্বার্থ ও অর্থনৈতিক লক্ষ্য মানবাধিকার নীতিকে ছাপিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সময় এবং পরে ট্রাম্প প্রশাসন যুবরাজের বিরুদ্ধে তীব্র ব্যবস্থা নিতে উৎসাহী ছিল না, বরং তাকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানিয়ে একটি পতাকা পদক্ষেপ দেখিয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার কর্মী ও পত্রিকা সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।