
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, যাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধবিরতি ও পুনর্গঠনের ২০-দফা পরিকল্পনাকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে এবং গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। হামাস অবিলম্বে অস্ত্র সমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, আর রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত থেকেছে।
প্রস্তাবে ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে, যা গাজার পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার তদারকি করবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীকে গাজার নিরস্ত্রীকরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে অস্ত্র ধ্বংস এবং সামরিক অবকাঠামো অপসারণ অন্তর্ভুক্ত।
গত মাসে ইসরায়েল ও হামাস ট্রাম্প পরিকল্পনার প্রথম ধাপ—দুই বছরের যুদ্ধে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি—মেনে নিয়েছিল। জাতিসংঘের এই প্রস্তাবকে অনেকে অন্তর্বর্তীকালীন শাসন ব্যবস্থার বৈধতা দেওয়া এবং গাজায় সৈন্য পাঠাতে ইচ্ছুক দেশগুলোকে আশ্বস্ত করার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
হামাস বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা কখনোই অস্ত্র সমর্পণ করবে না এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইকে বৈধ প্রতিরোধ হিসেবে বিবেচনা করে। “প্রস্তাবটি গাজা উপত্যকার ওপর আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে, যা আমাদের জনগণ ও সংগঠনসমূহ প্রত্যাখ্যান করে,” বলেছে হামাস। এর ফলে হামাস এবং অনুমোদিত আন্তর্জাতিক বাহিনীর মধ্যে সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মার্কিন জাতিসংঘ দূত মাইক ওয়াল্টজ বলেন, প্রস্তাবটি “ফিলিস্তিনিদের স্বায়ত্তশাসনের সম্ভাব্য পথ নির্দেশ করে… যেখানে রকেটের পরিবর্তে জলপাই শাখা থাকবে এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের রাজনৈতিক দিগন্ত নিয়ে ঐকমত্য হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, এটি হামাসের কব্জা ভেঙে দেবে এবং গাজাকে সন্ত্রাসের ছায়া থেকে মুক্ত, সমৃদ্ধ ও নিরাপদ করে তুলবে।
রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত থেকেছে। রুশ দূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, প্রস্তাবটি মূলত ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে গাজার পুরো নিয়ন্ত্রণ ‘বোর্ড অব পিস’ এবং আইএসএফ-এর হাতে তুলে দিচ্ছে, যাদের কার্যপদ্ধতি এখনও অজানা এবং জাতিসংঘের স্পষ্ট কোনো ভূমিকা নেই।
প্যালেস্টাইন কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বাস্তবায়নে অংশ নিতে প্রস্তুতি ঘোষণা করেছে। কূটনীতিকরা জানান, গত সপ্তাহে কর্তৃপক্ষের সমর্থনই রুশ ভেটো ঠেকাতে সাহায্য করেছে।
প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা উল্লেখ থাকায় ইসরায়েলের মধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। রোববার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল এখনও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরোধী এবং গাজাকে “সহজ উপায়ে হোক বা কঠিন উপায়ে” নিরস্ত্র করা হবে।
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “এটি সত্যিকারের ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বোর্ডের সদস্য এবং আরও অনেক উত্তেজনাপূর্ণ ঘোষণা আগামী সপ্তাহগুলোতে আসবে।”