অস্ট্রেলিয়া তার প্রতিবেশী ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র নাউরুর সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক চুক্তি দ্রুত অনুমোদনের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে, যার লক্ষ্য চীনের বিনিয়োগের প্রভাব নিয়ে কৌশলগত উদ্বেগের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের জোটকে শক্তিশালী করা। নাউরু সম্প্রতি চীনের একটি কোম্পানির সাথে ১ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের (৬৪৮.৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ চুক্তি ঘোষণা করেছে, যা অস্ট্রেলিয়ার সাথে চুক্তির শর্তাবলী লঙ্ঘন করতে পারে বলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া এবং নাউরু গত ডিসেম্বরে একটি যুগান্তকারী চুক্তি ঘোষণা করে, যেখানে অস্ট্রেলিয়া নাউরুর জন্য ১০০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার বাজেট সহায়তা এবং ৪০ মিলিয়ন ডলার নিরাপত্তা সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই চুক্তির বিনিময়ে, অস্ট্রেলিয়া নাউরুর নিরাপত্তা, ব্যাংকিং এবং টেলিযোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে চীনের সম্পৃক্ততার উপর ভেটো ক্ষমতা অর্জন করে। নাউরু ইতিমধ্যে এই চুক্তি অনুমোদন করেছে, তবে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে জাতীয় নির্বাচনের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে স্থগিত থাকায় এটি এখনও অনুমোদিত হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগের কর্মকর্তা মার্ক ট্যাটার্সল সোমবার (২৫ আগস্ট ২০২৫) একটি পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে বলেন, “এই চুক্তি দ্রুত অনুমোদন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এই তৎপরতার পেছনে প্রধান কারণ হলো নাউরুর সাম্প্রতিক ঘোষণা, যেখানে তারা চীন রুরাল রিভাইটালাইজেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (সিআরআরডিসি) নামে একটি স্বল্প পরিচিত চীনা কোম্পানির সাথে ১ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তি নাউরুর ক্যাবিনেটে এখনও বিবেচিত হয়নি বলে জানা গেছে, তবে অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন যে এটি তাদের নিরাপত্তা চুক্তির শর্তাবলী লঙ্ঘন করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে চীন এবং নাউরুর কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগ ২০২২ সালে সলোমন আইল্যান্ডসের সাথে চীনের একটি নিরাপত্তা চুক্তি এবং গত বছর প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষার পর থেকে আরও তীব্র হয়েছে। এই ঘটনাগুলো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে অস্ট্রেলিয়া এবং তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
নাউরু, যার জনসংখ্যা মাত্র ১২,০০০ এবং অর্থনীতির আকার ১৫০ মিলিয়ন ডলার, অস্ট্রেলিয়ার জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তির অধীনে, অস্ট্রেলিয়া নাউরুতে কমনওয়েলথ ব্যাংক অফ অস্ট্রেলিয়ার (সিবিএ) মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করবে, যা বেন্ডিগো ব্যাংকের প্রত্যাহারের পর নাউরুকে ব্যাংকিং সংকট থেকে রক্ষা করবে। এটি চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অফ চায়নার সম্ভাব্য প্রবেশকে বাধা দেওয়ার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া আগামী মাসে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের নেতাদের একটি বৈঠকে এই চুক্তির অনুমোদন ঘোষণা করতে চায়, যেখানে চীন উপস্থিত থাকবে না। অস্ট্রেলিয়ার প্যাসিফিক মন্ত্রী প্যাট কনরয় জোর দিয়ে বলেছেন, “আমরা চীনসহ অন্যান্য দেশের প্যাসিফিক অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতাকে সমর্থন করি, তবে নিরাপত্তার বিষয়ে প্যাসিফিক আইল্যান্ডস ফোরামের (পিআইএফ) সদস্য দেশগুলোর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি অস্ট্রেলিয়ার জন্য একটি কৌশলগত জয়, কারণ এটি চীনের প্রভাব কমাতে এবং নাউরুর মতো ক্ষুদ্র কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে সহায়তা করবে। তবে, নাউরুর অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং চীনের আকর্ষণীয় বিনিয়োগ প্রস্তাবের কারণে অস্ট্রেলিয়াকে দীর্ঘমেয়াদে এই অঞ্চলে প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে আরও বিনিয়োগ করতে হবে।