বেইজিং-এ শুক্রবার (২৫ জুলাই, ২০২৫) তীব্র বৃষ্টিপাতের পর শনিবার শহরের আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ ১৬টি জেলার মধ্যে ১০টিতে সম্ভাব্য ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়, যেমন ধস এবং কাদাপ্রবাহ, নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে। পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে, কারণ এই অঞ্চলগুলোতে আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।
সতর্কতা বেইজিং-এর ১০টি জেলাকে কভার করে, যদিও নির্দিষ্ট জেলাগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে, পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকা, যেমন মেন্টোগো এবং ফাংশান, পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোতে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে পরিচিত। এই অঞ্চলগুলো ২০২৩ সালের জুলাইয়ে রেকর্ড ৭৪৪.৮ মিমি বৃষ্টিপাতের সময় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।শুক্রবারের তীব্র বৃষ্টিপাতের পর শনিবার পাহাড়ি অঞ্চলে ফ্ল্যাশ ফ্লাডের সতর্কতা জারি করা হয়। বেইজিং-এর আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বৃষ্টিপাত ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়িয়েছে, বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায়। তীব্র বৃষ্টিপাতের ফলে ধস এবং কাদাপ্রবাহের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বাসিন্দাদের জীবন ও সম্পত্তির জন্য হুমকি। পাহাড়ি এলাকায় ফ্ল্যাশ ফ্লাডের সম্ভাবনা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা জোরদার করতে প্ররোচিত করেছে।জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চীনে তীব্র বৃষ্টিপাত এবং ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বেইজিং-এ ১৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৩ ঘণ্টায় ৭৪৪.৮ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল, যা ১৫,৩৮৩টি ধস সহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে, ৩৩ জনের মৃত্যু এবং ১.২৯ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শহর কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে এবং পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণ এড়াতে পরামর্শ দিয়েছে। উন্নত জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা, যেমন উচ্চ-রেজোলিউশন ক্যামেরা এবং স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে রিয়েল-টাইম হ্যাজার্ড আপডেট, বেইজিং-এর প্রতিক্রিয়া সময় উন্নত করেছে।বেইজিং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়াকে নীতিগত অগ্রাধিকার করেছে। ২০২৩ সালের বন্যার পর, চীনের আবহাওয়া প্রশাসন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তীব্র তাপ ও বৃষ্টিপাতের ক্রমবর্ধমান হুমকি সম্পর্কে স্পষ্ট সতর্কতা জারি করেছে।চীনের স্পঞ্জ সিটি প্রোগ্রাম (SCP), যা ২০১৫ সালে শুরু হয়েছিল, বেইজিং-সহ প্রধান শহরগুলোতে বন্যা প্রতিরোধে পরিবেশ-বান্ধব সমাধান প্রচার করে। তবে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে এই ব্যবস্থাগুলো তীব্র বৃষ্টিপাতের সময় দ্রুত অতিমাত্রায় পরিপূর্ণ হয়ে যেতে পারে।
২০২৩ সালে বেইজিং-এর মেন্টোগো, ফাংশান, এবং চ্যাংপিং জেলা ব্যাপক বন্যা ও ধসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, যেখানে ৫৯,০০০ বাড়ি ধ্বংস এবং ১৪৭,০০০ বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অর্থনৈতিক ক্ষতি ১৩.২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। জলবায়ু পরিবর্তন চীনে তীব্র বৃষ্টিপাত, টাইফুন, এবং ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের ঘটনা বাড়িয়েছে। ২০২৪ সাল ছিল চীনের জন্য ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ বছর, যা এই ধরনের ঘটনার তীব্রতা বাড়িয়েছে। চীনের ভূখণ্ডের ৬৯% পাহাড় ও মালভূমি নিয়ে গঠিত, যা জটিল ভূতাত্ত্বিক গঠনের কারণে ধস, কাদাপ্রবাহ, এবং শিলা পতনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বেইজিং-এর পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকাগুলো বিশেষভাবে প্রভাবিত।
২০২৫ সালের প্রথমার্ধে, চীনের দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা, ধস, এবং টাইফুনের কারণে ২৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৩০৭ জন মারা গেছে বা নিখোঁজ রয়েছে।
মে ২০২৫-এ, গুইঝো প্রদেশে তীব্র বৃষ্টিপাতে ধসের ফলে চারজন নিহত এবং ১৭ জন নিখোঁজ হয়েছিল। জুলাই ২০২৫-এ, ট্রপিক্যাল স্টর্ম ডানাস এবং মৌসুমী বৃষ্টির ফলে দক্ষিণ ও মধ্য চীনে ব্যাপক বন্যা ও ধস হয়েছিল।
বেইজিং-এর তীব্র বৃষ্টিপাতের ফলে জারি করা ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের সতর্কতা চীনের ক্রমবর্ধমান জলবায়ু-সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলোর একটি স্মরণ করিয়ে দেয়। ধস এবং কাদাপ্রবাহের ঝুঁকি, বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায়, জরুরি প্রস্তুতি এবং দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু অভিযোজন কৌশলের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। বেইজিং-এর কর্তৃপক্ষ উন্নত প্রযুক্তি এবং নীতিগত পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জোরদার করছে, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এই প্রচেষ্টাগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।