থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ তৃতীয় দিনে প্রবেশ করেছে, নতুন সংঘর্ষের সাথে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। উভয় দেশ একে অপরকে দোষারোপ করছে এবং বাইরের কূটনৈতিক সমর্থন চাইছে, যদিও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নেতারা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। এই সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন নিহত এবং ১৩০,০০০-এর বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে।
থাইল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সংঘর্ষে ২০ জন বেসামরিক নাগরিক এবং একজন সৈনিক নিহত হয়েছে, এবং ৩১ জন আহত হয়েছে। কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে একজন সৈনিক নিহত এবং এক্স-এ পোস্ট অনুযায়ী ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যা সর্বমোট হতাহতের সংখ্যা ৩২-এ নিয়ে যায়। থাইল্যান্ডে ১৩৮,০০০ এবং কম্বোডিয়ার ওদ্দার মিনচে প্রদেশে ৪,০০০-এর বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে।
সংঘর্ষ প্রধানত প্রিয়াহ ভিহার মন্দির এবং তা মোয়ান থম মন্দিরের আশেপাশের বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় কেন্দ্রীভূত। থাইল্যান্ডের সুরিন, উবোন রাচাথানী, এবং সিসাকেত প্রদেশ এবং কম্বোডিয়ার ওদ্দার মিনচে ও প্রিয়াহ ভিহার প্রদেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
থাইল্যান্ড ছয়টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে, যার একটি কম্বোডিয়ার সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডের বেসামরিক এলাকায় রকেট ও ভারী অস্ত্র নিক্ষেপের অভিযোগ করেছে। থাইল্যান্ড কম্বোডিয়াকে ক্লাস্টার মিউনিশন ব্যবহারের অভিযোগ করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ।
সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে, যখন উভয় পক্ষ একে অপরকে প্রথম গুলি চালানোর জন্য দায়ী করে। থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার ড্রোন তাদের অবস্থানের উপর দিয়ে উড়ছিল, এবং কম্বোডিয়ার সৈন্যরা তা মোয়ান থম মন্দিরের কাছে গুলি চালায়। কম্বোডিয়া দাবি করেছে, থাই সৈন্যরা প্রথমে ড্রোন ব্যবহার করেছে এবং তাদের অঞ্চলে অগ্রসর হয়েছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, যিনি ২০২৫ সালে আসিয়ানের চেয়ারম্যান, উভয় দেশের নেতাদের সাথে কথা বলে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এই প্রস্তাব সমর্থন করলেও দাবি করেছেন, থাইল্যান্ড প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়ে পরে প্রত্যাহার করেছে। থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা মালয়েশিয়ার প্রস্তাব নীতিগতভাবে সমর্থন করে তবে “উপযুক্ত স্থল পরিস্থিতি” প্রয়োজন। কম্বোডিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের জন্য আহ্বান জানিয়েছে, থাইল্যান্ডের “অযৌক্তিক ও পরিকল্পিত” হামলার অভিযোগ করে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উভয় পক্ষকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। চীন, কম্বোডিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র, শান্তি প্রচারে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।
ইউনিসেফ বেসামরিক হতাহত, বিশেষ করে শিশুদের মৃত্যু এবং স্কুল বন্ধের কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, উভয় পক্ষকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে শিশুদের সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এই সংঘর্ষ এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলমান প্রিয়াহ ভিহার মন্দিরকে কেন্দ্র করে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত বিরোধের অংশ। ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) মন্দিরটির উপর কম্বোডিয়ার সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে, তবে আশেপাশের অঞ্চলের সীমানা নিয়ে বিরোধ অমীমাংসিত রয়েছে। ২০০৮ সালে কম্বোডিয়ার ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে মন্দিরটির তালিকাভুক্তি থাইল্যান্ডে প্রতিবাদের জন্ম দেয়, যা ২০০৮-২০১১ সালের সংঘর্ষের সূত্রপাত করে। ২০২৫ সালের মে মাসে একজন কম্বোডিয়ান সৈনিক নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। বুধবার (২৩ জুলাই) একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে পাঁচজন থাই সৈনিক আহত হওয়ার পর উভয় দেশ তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে এবং কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে।
উভয় দেশে জাতীয়তাবাদী আবেগ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা শান্তি প্রক্রিয়াকে জটিল করছে। এক্স-এ পোস্টগুলোতে থাই ও কম্বোডিয়ান ব্যবহারকারীরা একে অপরকে আগ্রাসনের জন্য দায়ী করছে। উদ্বাস্তুদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য, পানি, এবং চিকিৎসা সরবরাহ করা হচ্ছে, তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এই সংঘর্ষকে ১৯৭০-এর দশকের পর সবচেয়ে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করেছেন।
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই সতর্ক করেছেন যে সংঘর্ষ “যুদ্ধের দিকে” যেতে পারে। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থাইল্যান্ডের কথিত ক্লাস্টার মিউনিশন ব্যবহারকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে নিন্দা করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন।
-উ, থাইল্যান্ডের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব এবং কম্বোডিয়ার চীনের সমর্থন উভয় পক্ষের অবস্থানকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আসিয়ানের মধ্যস্থতা এবং জাতিসংঘের সম্পৃক্ততা যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, তবে উভয় দেশের জাতীয়তাবাদী অবস্থান এবং ঐতিহাসিক শত্রুতা আলোচনাকে জটিল করে তুলছে। থাইল্যান্ড দ্বিপাক্ষিক আলোচনার উপর জোর দিয়েছে, যেখানে কম্বোডিয়া আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমাধান চায়। একটি পূর্ণ-মাত্রার যুদ্ধ অসম্ভাব্য, তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ঐতিহাসিক অভিযোগের কারণে সীমান্তে বির্মিত সংঘর্ষ অব্যাহত থাকতে পারে।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ তৃতীয় দিনে প্রবেশ করেছে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উদ্বেগ বাড়িয়েছে। যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও, উভয়া পক্ষের জাতীয়তাবাদী অবস্থন এবং সামরিক পদক্ষেপ শান্তি প্রক্রিয়াকে জটিল করছে। বেসামরিক হতাহত এবং উদ্বাস্তুদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা মানবিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। আসিয়ান এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে কূতনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও, সংঘর্ষের সমাধান নির্ভর করবে উভয় দেশের নেতৃত্বের ডিসেশন এবং আন্তর্জাতিক চাপের উপর।