
লন্ডন: আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ) তার সর্বশেষ ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি আউটলুক ২০২৫’ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বর্তমান সরকারি নীতিগুলোর ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা ২০৫০ সালের মধ্যভাগে দৈনিক ১১৩ মিলিয়ন ব্যারেলে পৌঁছাতে পারে, যা ২০২৪ সালের চাহিদার তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। এই পূর্বাভাস জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি তুলে ধরেছে, যার ফলে ২১০০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে।
আইইএ-এর এই বার্ষিক প্রতিবেদনটি সাধারণত শক্তি খাতের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে, কিন্তু এবার এটি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন প্যারিসভিত্তিক এই সংস্থাকে জলবায়ু-সমর্থক নীতির প্রচারের অভিযোগে সমালোচনা করে আসছে। মার্কিন শক্তি মন্ত্রী ক্রিস রাইট ‘পিক অয়েল ডিমান্ড’-এর ধারণাকে ‘অযৌক্তিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। এই প্রেশারের প্রেক্ষাপটে আইইএ তার পূর্ববর্তী পূর্বাভাস থেকে সরে এসে ‘কারেন্ট পলিসি সিনারিও’ (সিপিএস) নামে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে, যাতে দুর্বল জ্বালানির চাহিদা ২০৩০ সালের মধ্যে স্থিতিশীল না হয়ে বরং দীর্ঘমেয়াদে বাড়তে থাকবে বলে ধারণা করা হয়েছে।
সিপিএস-এর ভিত্তি হিসেবে বিদ্যমান সরকারি নীতিগুলো—যেমন নবায়নযোগ্য শক্তির ম্যান্ডেট, জ্বালানি উত্তোলন আইন এবং যানবাহন নির্গমন মান—ব্যবহার করা হয়েছে। এই সিনারিওটি নতুন প্রযুক্তির দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে, যার ফলে আগামী দশকগুলোতে জ্বালানি জ্বালানির ভূমিকা বেশি থাকবে বলে অনুমান করা হয়েছে। পূর্ববর্তী প্রতিবেদনগুলোতে জলবায়ু-সমর্থক নীতির বাস্তবায়ন নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, যা এবার সংশোধিত হয়েছে।
তবে এই পূর্বাভাসের অর্থনৈতিক দিকটি যতই বাস্তববাদী হোক না কেন, জলবায়ু পরিবর্তনের দিক থেকে এটি উদ্বেগজনক। বিজ্ঞানীরা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের লক্ষ্য অতিক্রম করলে বিপর্যয়কর প্রভাব এড়ানো অসম্ভব বলে সতর্ক করেছেন, কিন্তু সিপিএস-এর পথে তাপমাত্রা ২.৯ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। এছাড়া, এই সিনারিওটি কিছু সন্দেহজনক অনুমানের উপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাটারি, ইলেকট্রিক যানবাহন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির খরচ হ্রাসের সাম্প্রতিক অগ্রগতি ২০৩৫ সালের পর স্থবির হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হয়েছে। এছাড়া, অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনের দক্ষতা বৃদ্ধির হারও মধ্যবর্তীকালে কমবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুমানটি হলো ইলেকট্রিক যানবাহন (ইভি) বিক্রির গতি নিয়ে। বিশ্বব্যাপী নতুন গাড়ির বিক্রয়ে ২০২৫ সালে ইভি-এর অংশ ২৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০২০ সালের ৫ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। কিন্তু সিপিএস-এ এই গতির ধীরগতি অনুমান করা হয়েছে, যা রাস্তা পরিবহনের মাধ্যমে তেলের ব্যবহারের ৪৫ শতাংশকে প্রভাবিত করবে। এই ধরনের অনুমানগুলো শক্তি খাতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, এবং এগুলোর বাস্তবতা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক চলতে থাকবে।