
ভোলা শহরের নতুনবাজার চত্বরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে বাধাদানের মুখে পড়ে পৌর প্রশাসন। ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী ও অটোরিকশাচালকেরা পৌরসভার তিনটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। শনিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটে, যার পর জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ভোলা শহরের প্রাণকেন্দ্র নতুনবাজার চত্বরে শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে পৌরসভার কর্মীরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী ও হকাররা বাধা দিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। সংঘর্ষের মধ্যে পৌরসভার তিনটি ময়লা ও মালামাল পরিবহনের ট্রাক (গাড়ি) আগুনের কবলে পড়ে। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ঘটনাটি ঘটে এবং আধা ঘণ্টার মধ্যে গাড়িগুলো পুড়ে যায়। স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও সফল হন না। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিস এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নতুনবাজার চত্বর একসময় সামাজিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্র ছিল। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে পুকুর ভরাট এবং টাউন হল ভেঙে কমপ্লেক্স নির্মাণের পর আশপাশে শতাধিক অস্থায়ী দোকান গড়ে ওঠে। এগুলো অবৈধভাবে পৌরসভার সম্পত্তিতে দখল করে ব্যবসা চলছিল, যা পথচারীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছিল। পৌরসভা পূর্বাহে মাইকিং এবং নোটিশের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু তারা অমান্য করেন। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে শনিবার মালামাল গাড়িতে তুলে নেওয়ার সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু শাহাদাত মো. হাচেন পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, “পৌরসভা কর্তৃক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল এবং ৩টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।” তিনি আরও জানান, অভিযানের বিষয়ে পৌরসভা থেকে পুলিশকে পূর্বাহে অবহিত করা হয়নি। মামলা দায়ের হলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোলা সদর পৌরসভার প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, “নতুন বাজারে মডেল মসজিদের পাশে পৌরসভার নিজস্ব সম্পত্তিতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল ব্যবসায়ীরা। জনসাধারণের চলাচলের জন্য সেখান থেকে তাদেরকে চলে যাওয়ার জন্য পূর্বে মাইকিং করে এবং নোটিশ দিয়ে জানানো হয়েছে, কিন্তু তারপরও তারা যাচ্ছিল না। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে আজকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার শেষ পর্যায়ে মালামাল গাড়িতে তুলে নেওয়ার সময় কে বা কারা পৌরসভার ৩টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।”
নতুনবাজার হকার সমিতির সভাপতি মো. দুলাল বলেন, “আমরা কেউ অবৈধ নই। বিগত সময়ে ক্ষমতাসীনরা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দোকান বরাদ্দ দিয়েছিলেন। মাসে মাসে ভাড়াও দিতাম। কিন্তু বৈধতা না দিয়ে মৌখিকভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আমার তিনটি দোকান ভাঙায় ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা, আর সব মিলিয়ে শতাধিক দোকানে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে কে বা কারা পৌরসভার গাড়িতে আগুন দিয়েছে, আমরা জানি না। তখন শত শত বিক্ষুব্ধ মানুষ ছিল।”
ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, “বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনা শহুরে পরিকল্পনা এবং অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে সচেতনতা তুলে ধরেছে।