তাইওয়ানকে ১৯৪৫ সালে জাপানের কাছ থেকে চীনা শাসনে ফেরার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সপ্তাহান্তে বেইজিংয়ে বড় আকারের উদযাপন আয়োজন করতে যাচ্ছে চীন। তবে তাইওয়ান বলছে, বেইজিং ঐতিহাসিক সত্য বিকৃত করে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান জোরদার করতে চাইছে।
চীন ঘোষণা করেছে, তাইওয়ানের তথাকথিত ‘রেট্রোসেশন’—অর্থাৎ ১৯৪৫ সালে জাপানি শাসনের অবসান ঘটিয়ে দ্বীপটি চীনা নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসার—৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করবে। তিনজন কূটনৈতিক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানটি শনিবার বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
চীনের তাইওয়ান বিষয়ক দপ্তরের মুখপাত্র ঝু ফেংলিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, “তাইওয়ানের রেট্রোসেশন ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ের অন্যতম বড় অর্জন। এটি সমগ্র চীনা জাতির—তাইওয়ানসহ—রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফল, যা দুই প্রান্তের জনগণের যৌথভাবে উদযাপন করা উচিত।”
তিনি আরও জানান, চীন তাইওয়ানের নাগরিকদেরও অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, যদিও তিনি কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বা অংশগ্রহণকারী নেতাদের নাম উল্লেখ করেননি।
তবে তাইওয়ানের সরকার গত সপ্তাহে ঘোষণা দেয়, কোনো তাইওয়ানিজ সরকারি কর্মকর্তা যেন চীনের আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে অংশ না নেয়। তাইপে সরকারের দাবি, বেইজিং “ইতিহাস বিকৃত করে রাজনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছে।”
তাইওয়ান বলছে, ১৯৪৫ সালে দ্বীপটি জাপানের কাছ থেকে হস্তান্তরিত হয়েছিল রিপাবলিক অব চায়না (ROC) সরকারের কাছে—যে সরকারই পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধ শেষে তাইপেতে স্থানান্তরিত হয়। অথচ চীন এখন বলছে, তারা ঐ সরকারের উত্তরসূরি হিসেবে দ্বীপটির ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করতে পারে।
তাইওয়ানের মতে, এটি ইতিহাস বিকৃতি, কারণ পিপলস রিপাবলিক অব চায়না (PRC) ১৯৪৯ সালের আগে আদৌ বিদ্যমান ছিল না। তাইওয়ানের বর্তমান আনুষ্ঠানিক নাম এখনো রিপাবলিক অব চায়না।
এই ইস্যু নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ নতুন নয়। ২০১৫ সালের আগের একই বার্ষিকীতে চীনের চতুর্থ শীর্ষস্থানীয় নেতা ইউ ঝেংশেং বক্তৃতা দিয়েছিলেন, যেখানে বিদেশি প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
চীনের মুখপাত্র ঝু পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “তাইওয়ান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে এবং চীনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে তাদের নাগরিকদের ভয় দেখিয়ে বিরত রাখছে।”
চীন গত মাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি উপলক্ষে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজও করেছে। অন্যদিকে, একই দিনে শনিবার তাইপেতে অনুষ্ঠিত হবে পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম প্রাইড মিছিল, যেখানে এলজিবিটিকিউ+ অধিকারের বৈচিত্র্য উদযাপিত হবে।