রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম ওরফে রাব্বিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। গ্রেপ্তারের খবরে অবাক হয়েছেন তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের এলাকাবাসী।
গতকাল সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের ‘সেফ হাসপাতালে’ একটি মৃত শিশু জন্মগ্রহণকে কেন্দ্র করে সাইফুল ইসলাম (২৮) নিজেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনীকে খবর দিলে সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাইফুলসহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল্লাহ আল তায়াব জানান, চাঁদাবাজির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে চাঁদাবাজির পেছনে অন্য কেউ জড়িত কি-না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর সংসারের অভাব-অনটন সামলাতে প্রায় এক যুগ আগে ঢাকায় যান। প্রথমে গার্মেন্টসে কাজ করলেও ২০১৮ সালের দিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। পরে মোহাম্মদপুর থানা শাখার আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। গত মে মাসে ধানমন্ডিতে এক প্রকাশকের বাড়ি ঘেরাও করে তিনি আটক হলেও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ থানায় গিয়ে তাকে জিম্মায় নিয়ে আসেন।
গ্রামের বাড়িতে বাবা সোহরাব হোসেন (৬০) অন্যের গবাদিপশু পালন ও দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান। ছেলের চাঁদাবাজির খবর শুনে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ, স্ত্রীও অসুস্থ। ছেলে মাসে এক-দুই হাজার টাকা পাঠাত। ঋণ করে চিকিৎসা চলছে। সে এমন কাজ করবে কল্পনাও করিনি।’
প্রতিবেশী মেহেদী হাসান জানান, ‘সাইফুল এলাকায় খুব একটা আসত না। দেখতে শুনতে শান্ত ছেলে। ঢাকায় গিয়ে যাদের সঙ্গে মিশেছে, তারাই হয়তো খারাপ পথে ঠেলে দিয়েছে।’ স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. হারুন বলেন, ‘গ্রামের সহজ-সরল ছেলে চাঁদাবাজির মতো জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়বে—এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।’
মানবাধিকার কর্মী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ড. তানভীর আহমেদ বলেন, ‘আন্দোলনের নামে কেউ যদি সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দল বা সংগঠন যার-ই হোক, আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’