তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের সময় শি জিনপিং, ভ্লাদিমির পুতিন এবং কিম জং উনের শক্তিশালী নেতৃত্বের কাল্টের সমালোচনা করেছেন। চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক হুমকির প্রেক্ষিতে তাইওয়ান উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং নাগরিকদের এই কুচকাওয়াজ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
তাইপেই, ৩ সেপ্টেম্বর: তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে মঙ্গলবার বেইজিংয়ে চীনের আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজের সমালোচনা করে বলেন, “শক্তিশালী নেতৃত্বের কাল্ট গণতন্ত্র ও শান্তির জন্য হুমকি। আমরা শান্তি ও সহযোগিতার পক্ষে, কিন্তু কোনো হুমকির কাছে মাথা নত করব না।” এই কুচকাওয়াজ, যেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন উপস্থিত ছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়।
চীন তাইওয়ানকে তার নিজস্ব অঞ্চল হিসেবে দাবি করে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাইওয়ানের কাছাকাছি সামরিক মহড়া এবং বিমান প্রবেশের ঘটনা বৃদ্ধি করেছে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মাসে চীনের বিমান বাহিনী তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা সনাক্তকরণ অঞ্চলে (এডিআইজেড) ১২০ বারের বেশি প্রবেশ করেছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাইওয়ানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র চেন পিন-হুয়া বলেন, “চীনের এই কুচকাওয়াজ শুধুমাত্র তার সামরিক শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং তাইওয়ান এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। আমরা আমাদের নাগরিকদের এই ইভেন্ট এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছি।”
তাইওয়ানের বিরোধী দল কুওমিনতাং (কেএমটি), যারা ঐতিহাসিকভাবে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে, এই কুচকাওয়াজে ন্যূনতম প্রতিনিধিত্ব পাঠিয়েছে। কেএমটি’র একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের পক্ষে, কিন্তু এই ধরনের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ আমাদের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।” তবে, দলটি চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে।
চীনের কুচকাওয়াজে উন্নত স্টিলথ ফাইটার জেট, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং পানির নিচের ড্রোন প্রদর্শিত হয়, যা তাইওয়ানের জন্য উদ্বেগের কারণ। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক লিন ইউ-চুন বলেন, “চীনের এই প্রদর্শনী তাইওয়ানের উপর সামরিক চাপ বাড়ানোর একটি কৌশল। আমাদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা জোরদার করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়াতে হবে।” তাইওয়ান সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র ক্রয় করেছে এবং জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়াচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য ত্রিপক্ষীয় জোটের আলোচনা তাইওয়ানের জন্য আরেকটি উদ্বেগ। প্রেসিডেন্ট লাই বলেন, “এই ধরনের জোট গণতান্ত্রিক বিশ্বের জন্য হুমকি। আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে আমাদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষা করব।” তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের উদ্বেগ তুলে ধরছে এবং আঞ্চলিক শান্তি নিশ্চিত করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।