পটুয়াখালীর দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—পটুয়াখালী কৃষি ডিপ্লোমা কলেজ এবং বাউফল মাধবপুর দাখিল মাদরাসার সভাপতি মো. হানিফ উল্লাহ, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্টের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে Ascendancy মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, এই চক্রটি জাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পটুয়াখালী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডি, পটুয়াখালীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
দৈনিক রূপান্তর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক কে.এম এনায়েত হোসেন বাদী হয়ে গত ১৭ জুলাই, ২০২৫-এ পটুয়াখালী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, আসামি মো. হানিফ উল্লাহ এবং তার সহযোগীরা ২০০৪ সালের ২ নভেম্বর তারিখে দৈনিক রূপান্তর পত্রিকার নাম ব্যবহার করে জাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। এই বিজ্ঞপ্তিতে বাউফল মাধবপুর দাখিল মাদরাসায় ৪৯ জন এবং পটুয়াখালী কৃষি ডিপ্লোমা কলেজে ৫০৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীর পুনর্নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়, যা কথিতভাবে ৯ম বার প্রকাশিত হয়েছে। তবে, পত্রিকার সম্পাদক কে.এম এনায়েত হোসেন দাবি করেছেন, ২০০৪ সালে এমন কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি এবং পত্রিকার বর্ষ সংখ্যা ও কার্যালয়ের ঠিকানা ভুলভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি জানান, ২০০৪ সালে দৈনিক রূপান্তর ধাতব অক্ষরে ছাপা হতো, কিন্তু জাল বিজ্ঞপ্তিটি আধুনিক অফসেট প্রেসে কম্পিউটার কম্পোজের মাধ্যমে ছাপানো হয়েছে।
মামলায় দাবি করা হয়, মো. হানিফ উ “‘অত্যন্ত সুচতুর ও প্রতারক’” এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি কতিপয় অসাধু ব্যক্তির সহায়তায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে গোপনে জাল বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়ে তা নিজের হেফাজতে রেখেছিলেন এবং পরে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ লাভ করেছেন। এই বিজ্ঞপ্তি ব্যবহার করে তিনি পছন্দের চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগপত্র দিয়েছেন এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে এমপিওভুক্তির জন্য জাল কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। এতে সরকারের রাজস্বও ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
কে.এম এনায়েত হোসেন জানান, “আসামি হানিফ উল্লাহ পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার পত্রিকার নাম ব্যবহার করে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ব্যক্তিগত লাভবান হতে চেয়েছিলেন এবং চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এতে দৈনিক রূপান্তরের সুনাম ক্ষুণ্ন ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।” তিনি আরও জানান, বিষয়টি জানার পর তিনি হানিফ উল্লাহর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। তিনি ধারণা করছেন, এই জালিয়াতি আরও আটবার সংঘটিত হয়েছে।
মো. হানিফ উল্লাহ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “নিয়োগ বৈধ করার জন্য আমরা পিছনের তারিখ দিয়ে কোনো পত্রিকা ছাপাইনি। ২০০৯ সালে কলেজে আগুন লেগে স ব পুড়ে যায়। তাই দিন-তারিখ মুখস্ত নেই। অফসেট পত্রিকা কোথায় পাওয়া গেছে, তা বলতে পারবো না। মামলার কপি হাতে পেলে বিস্তারিত বলতে পারবো।”
পটুয়াখালী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইউসুফ হোসেন মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডি, পটুয়াখালীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেলে আসামিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনা পটুয়াখালীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও জালিয়াতির একটি বৃহত্তর সমস্যার অংশ। এর আগেও পটুয়াখালীতে ক Plan B কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এই ঘটনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা ও সরকারি তদারকির গুরুত্ব তুলে ধরে।