সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পটুয়াখালীর ২২ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ রবিবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে। সকাল থেকেই এসব গ্রামে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল। নতুন পোশাক পরা শিশুদের আনন্দ, বাড়ির আঙিনায় নারীদের ব্যস্ততা, ঈদগাহমুখী মানুষের ঢল—সব মিলিয়ে ঈদের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
সকালে পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরীফেও ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের উত্তর নিশানবাড়িয়া জাহাগিরিয়া শাহ্সূফি মমতাজিয়া দরবার শরীফ মাঠে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল পৌনে নয়টায় অনুষ্ঠিত এই জামাতে হাজারো মুসল্লি অংশ নেন।
নামাজ শেষে মুসল্লিরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ঈদ উদযাপনের এই বিশেষ ঐতিহ্য পটুয়াখালীর গ্রামগুলোতে চলে আসছে প্রায় একশ বছর ধরে। চট্টগ্রামের এলাহাবাদ সুফিয়া ও চানটুপির অনুসারী হিসেবে পরিচিত এই মুসল্লিরা সৌদি আরবের চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা ও ঈদ পালন করেন। তাই তারা বরাবরের মতো এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগেই ঈদ উদযাপন করলেন।
ঈদের দিন সকাল থেকেই এসব গ্রামে আনন্দের জোয়ার বইছিল। পুরুষেরা ঈদগাহমুখী হলে, ঘরের ভেতর ব্যস্ত হয়ে পড়েন নারীরা। রান্নার খোঁজখবর নেওয়া, অতিথিদের আপ্যায়নের প্রস্তুতি নেওয়া—সব মিলিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। নামাজ শেষে বাড়িতে ফিরেই শুরু হয় মিষ্টিমুখ। কোথাও সেমাই-পায়েস, কোথাও আবার বিরিয়ানি—ঈদ উপলক্ষে তৈরি করা নানা রকম খাবারে মুখর হয়ে ওঠে প্রতিটি পরিবার।
শিশুদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। নতুন পোশাকে সেজেগুজে তারা ছোটাছুটি করছিল, আনন্দ ভাগাভাগি করছিল বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে। ঈদ মানেই তাদের জন্য বাড়তি আনন্দ, নতুন জামা-কাপড়, মজাদার খাবার আর উপহারের হাতছানি।
এবারের ঈদকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে বাড়তি আনন্দ ছিল। কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছিলেন, কেউ আবার প্রতিবেশীদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন। বহুদিন পর ঈদের দিনে দেখা হওয়া অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
পটুয়াখালীর গ্রামগুলোতে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আগাম ঈদ উদযাপনের এই রীতি বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি শুধু ধর্মীয় উৎসবই নয়, বরং পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার এক উপলক্ষ হিসেবেও দাঁড়িয়েছে। বাড়ির উঠোনে বড়দের গল্প, ছোটদের কোলাহল, সবার মিলিত হাসিমুখ—সব মিলিয়ে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি ঘরে।