সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির যুগে আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ। সাধারণত গরু-মহিষ দিয়ে হাল চাষের প্রচলন এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে, তবে ঘোড়া দিয়ে হাল চাষের এই নতুন প্রবণতা কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলছে।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) তাড়াশ উপজেলার বিনসাড়া গ্রামের পশ্চিমের বিস্তীর্ণ মাঠে দেখা যায়, অন্তত ছয়টি ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ চলছে। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার প্রয়োজনের সময় সহজে পাওয়া যায় না, আর পাওয়া গেলেও ঘোড়ার মইয়ে জমির মাটি সঠিকভাবে সমান করা যায়, যা ধানের ফলন বৃদ্ধিতে সহায়ক।
তালম ইউনিয়নের জন্তিপুর গ্রামের ঘোড়ার গাড়িওয়ালা আয়জদ্দি ফকির প্রথম এই ঘোড়ার জোয়াল-মইয়ের প্রচলন শুরু করেন। তিনি জানান, ঘোড়া দিয়ে জমির কাঁদা মাটি সঠিকভাবে সমান করা সম্ভব, যা অন্য কোনো যন্ত্র দিয়ে সম্ভব নয়। ঘোড়া একই জায়গায় বারবার ঘুরতে পারে, ফলে জমির মাটি সমান হয়, যা ট্রাক্টর বা মহিষ দিয়ে করা সম্ভব হয় না। তার এই উদ্যোগ দেখে তাড়াশ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলাতেও ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ শুরু হয়েছে।
আয়জদ্দি ফকিরের নাতি আশরাফুল ইসলাম জানান, গত বছর বোরো মৌসুমে প্রথমবার তারা এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেন এবং এর সফলতা দেখে এখন অনেকেই এই পেশা গ্রহণ করছেন। আশরাফুল বলেন, “প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ বিঘা জমিতে মই দিতে পারি, এবং এক বিঘা জমিতে মই দিয়ে ২০০ টাকা আয় হয়, যা আমাদের পরিবারের আর্থিক অনটন দূর করতে সহায়তা করছে।”
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ঘোড়ার জোয়াল-মই কৃষকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। তিনি বলেন, “জমির কাঁদা মাটি সমান করতে ঘোড়ার মইয়ের বিকল্প নেই। মাটি সমান হলে ধানও ভালো হবে, যা কৃষকদের জন্য লাভজনক।”
কৃষকদের এ উদ্যোগ আধুনিক যন্ত্রপাতির বিকল্প হয়ে উঠতে পারে, যা স্থানীয় অর্থনীতি ও কৃষি ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।