বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং ব্যয়বহুল জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অন্যতম হলো চীনের থ্রি গর্জেস ড্যাম। প্রায় চল্লিশ হাজার শ্রমিকের টানা ১৭ বছরের পরিশ্রমে তৈরি এই ড্যামটি ১৯৯৪ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০১১ সালে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়। এই প্রকল্পটির পেছনে খরচ হয়েছে ৩১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি, যা চীনের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত উন্নয়নের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত।
এই মেগা প্রকল্পটি শুধু চীনের অর্থনীতিতে নয়, বরং পৃথিবীর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যেও পরিবর্তন এনেছে। ২০০৫ সালে নাসার একটি গবেষণায় উঠে আসে যে, থ্রি গর্জেস ড্যামের বিপুল জলরাশির কারণে পৃথিবীর আকৃতিতে সামান্য পরিবর্তন ঘটেছে এবং আহ্নিক গতি ধীর হয়েছে। ফলে পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য ০.০৬ মাইক্রোসেকেন্ড পর্যন্ত বেড়েছে।
এশিয়ার সবচেয়ে বড় নদী ইয়াংসির ওপর নির্মিত এই ড্যাম চীনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চীন শুধু তাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করেনি, বরং বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারেও সক্ষম হয়েছে।
থ্রি গর্জেস ড্যামের প্রভাবে ১৯৩১ সালের ভয়াবহ বন্যার মতো বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হয়েছে, যেখানে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এ ধরনের ভয়াবহ বন্যা থেকে দেশকে রক্ষা করতেই চীন সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়।
এই ড্যামের পানি সংরক্ষণের ক্ষমতা এতই বিশাল যে, এর প্রভাবে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কিছুটা ধীর হয়েছে। ০.০৬ মাইক্রোসেকেন্ড পর্যন্ত সময় বেড়ে যাওয়ায় দিনের দৈর্ঘ্যও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া থ্রি গর্জেস ড্যাম চীনের বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি খরাও মোকাবিলা করছে।
চীনের জন্য এটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত কৃতিত্ব নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তি প্রদর্শনের একটি প্রতীকও বটে।