কোটার যৌক্তিক সংস্কার যা ইতোমধ্যেই সরকার আপিল বিভাগের নির্দেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করেছেন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের মূল দাবি মেনে নেওয়ায়, আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়করা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
এই আন্দোলনে অনেকে অপ্রত্যাশিতভাবে আহত ও নিহত হয়েছেন। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় অনেক সম্পদ, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সেতু ভবন, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে যা কখনোই কাম্য নয়। এই সকল অনাকাঙ্খিত ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
একইসাথে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রবিরোধী কোন অপশক্তি যাতে ফায়দা লুটতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
ইতোমধ্যে আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে থাকা অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ জন সমন্বয়ক আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের স্বজনরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, জোর করে তাদেরকে দিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয় নি।
রোববার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় ডিবি কার্যালয়ে নিরাপত্তা হেফাজতে থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদার, আসিফ মাহমুদ ও নুসরাত তাবাসসুম তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের তথ্য জানিয়ে বিবৃতি দেন। পাশাপাশি তারা একটি ভিডিও বার্তায় আন্দোলন প্রত্যাহারের বিবৃতিটি পড়ে শোনান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়:
গত ২৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দেওয়াসহ কয়েকটি দাবি পূরণে ৩০ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়:
গত ২৭ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও নানা বাস্তবতায় আপাতত কোনো কর্মসূচি নেই বলে জানান বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক সুজয় বিশ্বাস শুভ। তবে তারা হল খুলে দেওয়া, শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধসহ চার দফা দাবিও জানান।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়:
গত ২৮ জুলাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা আন্দোলন প্রত্যাহার ঘোষণা করেছে, তারাই শুরু থেকে আন্দালনে নেতৃত্ব দিচ্ছিল।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়:
কোটা সংস্কার আন্দোলন সংক্রান্ত কর্মসূচি ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে সোমবার (২৯ জুলাই) শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে বৈঠক থেকে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দাবি জানিয়ে সব ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।
মাভাবিপ্রবি:
কোটা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান মাভাবিপ্রবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়া শিক্ষার্থীরা ।
ফরিদপুর জেলা:
ফরিদপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকারের নির্বাহী বিভাগ দাবি মেনে নেয়ায় সকল আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন নেতারা।
যশোর জেলা:
কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে যশোরের সমন্বিত ছাত্র ঐক্য পরিষদ। সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে সমন্বিত ছাত্র ঐক্য পরিষদ ও যশোর জেলা শাখার নেতারা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। সেই সঙ্গে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
খুলনা জেলা:
খুলনায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন সমন্বয়করা। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা সার্কিট হাউজে জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা এই ঘোষণা দেন।