দীর্ঘ ৭৭ বছর পর রাজশাহী ও কলকাতার মধ্যে সরাসরি রেল সংযোগ পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা। গত শনিবার (২২ জুন) দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই রেল সংযোগ পুনরায় চালু হলে উত্তরবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, “এটি আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। অবশেষে বহুল কাঙ্ক্ষিত রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে।”
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ট্রেনটি রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের সিঙ্গাবাদ, মালদহ, ফারাক্কা, কাটোয়া, খাগড়াঘাট হয়ে কলকাতার হাওড়া রেলস্টেশনে পৌঁছাবে। মোট দূরত্ব হবে প্রায় ৪২৫ কিলোমিটার, যা অতিক্রম করতে সময় লাগবে আনুমানিক ১১ ঘণ্টা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন, জানান, “আমরা এই প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। তবে চূড়ান্ত রুট নির্ধারণসহ বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আরও আলোচনা প্রয়োজন।”
বর্তমানে ঢাকা-কলকাতা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস, ঢাকা-খুলনা রুটে বন্ধন এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-শিলিগুড়ি রুটে মিতালী এক্সপ্রেস চলাচল করছে। রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস চালু হলে এটি হবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চতুর্থ আন্তর্জাতিক রেল সংযোগ।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই রেল সংযোগ দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য দুই দেশের মধ্যে নিবিড় সমন্বয় ও সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, “এই রেল সংযোগ শুধু যাতায়াত সহজ করবে না, এটি দুই বাংলার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে। এর মাধ্যমে শিক্ষা, গবেষণা ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান আরও গতিশীল হবে।”
প্রকল্পটির সময়সীমা ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণا আসেনি। তবে উভয় দেশের সরকার এটিকে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।