সরকারের ‘মোটরযান গতিসীমা নীতিমালা-২০২৪’ বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এই নীতিমালাকে ‘অবৈজ্ঞানিক’ আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেছেন যে সড়ক অবকাঠামো ও পরিবহন খাতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পরই গতিসীমা নীতিমালা বাস্তবায়ন করা উচিত।
বুয়েটের অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এম শাহাদাত হোসেন বলেছেন, “সড়কের অবকাঠামো, যানবাহনের প্রকৃতি বিবেচনায় না নিয়ে যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে তা আদৌ কার্যকর হবে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, বাস্তবে দুই লেনের মহাসড়কে নীতিমালা অনুযায়ী গতিসীমা বৃদ্ধিতে ওভারটেকিং বেড়ে যাবে এবং সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
একই মতামত ব্যক্ত করেছেন বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. আরমানা সাবিহা হক। তিনি বলেন, “গতি নিয়ন্ত্রণে গত ২০১৫ সালে যানবাহনে স্পিড গভর্নর ডিভাইস বসানোর সিদ্ধান্ত নিলেও সেটি তো আদৌ বাস্তবায়িত হয়নি।”
পাশাপাশি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান জানান, মহানগরীতে যানজট রয়েছে এবং এখানকার সড়ক অবকাঠামো অনুযায়ী গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
অন্যদিকে, সরকার গঠিত ১৭ সদস্যের জাতীয় কমিটির বিভিন্ন সুপারিশ গ্রহণ না করায় সমালোচনা রয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে কমিটির সদস্যদের।
এদিকে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে প্রায় ২২.৪৫%। এ প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
এব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন, এখনই এক্সপ্রেসওয়েয়ে গতিসীমা বাড়ানো হবে না। আগে সড়ক দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনতে হবে। তবে বিআরটিএর এনফোর্সমেন্ট বিভাগে এখন মাত্র ৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট আছেন, যা নীতিমালা বাস্তবায়নে বাধাস্বরূপ হতে পারে।
সর্বোপরি বিদ্বত্তমহল মনে করেন, গতিসীমা নির্ধারণের আগেই যানবাহনের ফিটনেস, সড়কের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সামগ্রিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধু গতিসীমা নির্ধারণ করলেই সমস্যা সমাধান হবে না বলে মনে করছেন তারা।