বেসরকারি টিভি চ্যানেলের নাম নকল করা ইউটিউব চ্যানেল নাগরিক টিভির সাথে জড়িত যারা, তারা প্রত্যেকেই দাগি অপরাধী। আসুন তাদের ইতিহাস জানা যাক। ভুয়া চ্যানেলটির নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে টিটো রহমান ও বার্তা সম্পাদক নাজমুস সাকিব; দুজনই প্রতারক ও চাঁদাবাজ। আর তাদের সাথে আছে কুখ্যাত ধান্দাবাজ ও গালিবাজ জ্যাকব মিল্টন। এই চক্রটির সদস্যদের নামে দেশে এবং বিদেশেও মামলা রয়েছে। যা তুলে ধরা হবে একটু পরেই।
টিটো রহমান ঢাকার জিগাতলার মৃত ডা. মতিনুর রহমানের ছেলে, বর্তমানে কানাডায় আশ্রিত। আর নাজমুস সাকিব সবুজবাগের জলিলুর আজমের ছেলে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রিত। ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গুজব, আপত্তিকর, কুরুচিপূর্ণ, মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও রাষ্ট্রবিরোধী তথ্য ছড়ানোয় চক্রটির বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা হয়। শুধু প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবার নয়; তাঁর আত্মীয়-স্বজন, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রী, সাংসদ এবং দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধেও বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে চক্রটি। এছাড়া দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নিয়েও প্রতিনিয়ত গুজব ছড়াচ্ছে তারা। আরেক ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেন নাগরিক টিভির ধান্দাবাজির মুখোশ খুলে দেন এভাবে [লিংক: https://www.facebook.com/watch/?v=3208059936105217]
টিটোর রহমান এবং নাজমুস সাকিবদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলাগুলো সম্পর্কে যেসব তথ্য মিলেছে, তা তুলে ধরা হলো।
জানা যায়, টিটো ও সাকিবের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা হলে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। বিদেশে আশ্রয় নিতে জ্যাকব মিল্টনের মত ভুয়া মানবাধিকার কর্মীর শরণাপন্ন হন তারা। বিদেশে টিকে থাকতে দরকার প্রচুর অর্থ। স্বল্পশিক্ষিত টিটো-সাকিব আর তাদের গুরু মিল্টন- তিন বাটপার মিলে ইউটিউবে গড়ে তোলেন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের কারখানা। সেখান থেকে রাষ্ট্রবিরোধী গুজব ছড়ানো শুরু করেন তারা। টিটোর পরিবার স্বাধীনতাবিরোধী। তার দাদা একাত্তরের ঘাতক ছিলেন, বাবা মতিনুর রহমানও ছিলেন রাজাকার। পরিবারের সাথে ছিল বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ওঠাবসা। রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে টিটো দিনাজপুরে মাদকসেবী ও নারী নিপীড়ক হিসেবে পরিচিত। ইভটিজিংয়ের জন্য বহুবার তিনি শাস্তি পেয়েছিলেন। এলাকায় তার বিরুদ্ধে নিয়মিত শালিস বসত। জনসম্মুখে বহুবার জুতাপেটা ও কান ধরে ওঠবস করানো হয় তাকে ইভটিজিংয়ের কারণে। দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়াকালে এক নারী শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। মামলাও হয়।
অন্যদিকে, রাজধানীর সবুজবাগে ২০১১ সালে নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে ৫ বছর বয়সী এক শিশু ধর্ষণের মামলা হয়। মামলার পরই দেশ ছেড়ে পালান সাকিব। মামলার এজাহারে বলা হয়, সবুজবাগ এলাকার ২৮নং মায়াকানন বাড়ির পেছনে ৩টি বাড়ির পর একটি টিনশেড ঘরে পরিবারের সঙ্গে থাকত শিশুটি। পিতা সিএনজি অটোরিকশা চালক। ঘটনার দিন ছোট্ট শিশুটিকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে নিজ বাড়ি মায়াকাননের ছাদে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে নিচতলায় গ্যারেজে রেখে পালিয়ে যান সাকিব।
এবার আসি কুখ্যাত জ্যাকব মিল্টনের ব্যাপারে। মূলত সবচেয়ে বড় ধড়িবাজ এই মিল্টন। ঢাকা সেনানিবাসে ঠিকাদারির সময় দুর্নীতির দায়ে ব্ল্যাকলিস্টেড হয়ে পরে গা ঢাকা দেন। দেশ ছেড়ে পালানোর আগে মতিঝিলে এক বাড়ির দারোয়ান হিসেবেও কাজ করেন মিল্টন। সেনানিবাসে মালামাল সাপ্লাইয়ের কাজ করতেন অথচ বিভিন্ন জায়গায় পরিচয় দেন আর্মির ক্যাপ্টেন। আবার কখনো নিজেকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা বলেও পরিচয় দেন খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সম্পর্কের কারণে। নিউইয়র্কে এক মর্টগেজ কোম্পানির নামে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে প্রবাসীদের সর্বনাশ করে ৭ বছর জেল খাটেন এই কুখ্যাত অপরাধী। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ডার ক্রস করার অনুমতি নেই তার। তার নামে ফেডারেল নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নারী নেত্রী নীরা রাব্বানিকে সমাজে বোন পরিচয় বেড়ান অথচ বাড়িতে লিভ টুগেদার করেন মিল্টন। তার বাড়িতে গিয়ে বিষয়টা টের পান ইলিয়াস। ইলিয়াসও নীরার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চাইলে নীরা ক্ষেপে যান। ছোটলোক বলে গালাগাল করেন! এ নিয়ে মিল্টনের সাথে ইলিয়াসের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। যার জের ধরে ইলিয়াসকে গ্রেপ্তার করান। মিল্টন-নীরার অবৈধ সম্পর্ক বাঙালি কমিউনিটির সবাই জানতেন। নাইটক্লাবে নগ্ন নৃত্য করা, মদ খেয়ে পাড়া মাথায় তোলা মিল্টন অতি জঘন্য ভাষায় গালাগাল ছাড়া কোনো কথা বলতে পারেন না- এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। সেই অসৎ ও বেহায়াপনা করা মিল্টন নাগরিক টিভির টকশোতে এসে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে গালাগাল দিয়ে সবক দেন- ধর্মশিক্ষা জরুরি, মানুষের বেসিক ফাউন্ডেশন গড়ে দেয়! অথচ এই সেক্স ম্যানিয়াক নিজেই চরম ভন্ড ও মিথ্যাবাদী। বিল ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটনের ক্যাম্পেইনে ২ হাজার ডলার চাঁদা দিয়ে সেই ছবি ব্যবহার করে নিজেকে অনেক বড় কিছু প্রমাণ করতে চায় মিল্টন। ইলিয়াস এসব ফাঁস করে দেন [লিংক- https://www.facebook.com/watch/?v=654145632859699]
কুখ্যাত এই নাগরিক টিভির প্লাটফর্ম ব্যবহার করে চক্রটি দেশের বিরুদ্ধে ধৃষ্টতা দেখিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে ফুলেফেঁপে উঠছে অবৈধ অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে। ইউটিউব চ্যানেলটির মাধ্যমে সাকিব, টিটো ও মিল্টন বাংলাদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেলিং ও চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। চক্রটির শিকার হয়েছিল দেশের সবচেয়ে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপও। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৬ লাখ মার্কিন ডলার হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে চক্রটি। চাঁদা না দিলে ভুয়া প্রতিবেদন ও প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে ব্যবসার সুনাম নষ্ট করে দিবে, এমন হুমকিও দেওয়া হয়। যদিও সাইবার প্রোপাগান্ডার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হওয়ায় ইলিয়াস এই অপকর্ম ফাঁস করে দেন। এছাড়াও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে বিভিন্ন সময় ফেসবুক ও ইউটিউবে বিতর্কিত ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বহু প্রমাণ রয়েছে চক্রটির বিরুদ্ধে। তাদের অপপ্রচার থেকে বাদ যাননি বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, সাবেক সেনাপ্রধান ও সাবেক পুলিশ প্রধানরাও। চক্রটি নানাভাবে চেষ্টা করেছিল বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে নগদ অর্থ এবং সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে ধান্দাবাজির সুযোগ পেতে। কিন্তু ধান্দাবাজ চক্র ও তাদের এদেশি লবিস্টরা সেই সুযোগ পায়নি বলে তারা এখন লিপ্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের চরিত্রহননে। এমনকি শিক্ষাখাত নিয়ে নানারকম অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে ভারতই নাকি শিক্ষামন্ত্রী বানিয়েছে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে! এসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজবের একমাত্র লক্ষ্য দেশে ভারতবিরোধী গোষ্ঠীকে উস্কে দিয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা। এদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে।