দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্রলীগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে ফিলিস্তিনের পক্ষে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও যুদ্ধ বিরতীর পক্ষে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালানো শিক্ষার্থীদের ওপর দেশটির পুলিশের নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে সংহতি প্রকাশ করে এই শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। দেশের সকল গণমাধ্যমেই এ বিষয়ে কথা বলেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মানবিক এই আবেদনের প্রতি সমর্থন জানান দেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এখনও এ বিষয়টি নিয়ে নিরব ছাত্রদল ও সমমনা ছাত্র সংগঠনগুলো। কিন্তু কেনো?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও টুইটার অ্যাকাউন্ট সহ সবখানে যখন ছাত্রলীগের এই কার্যক্রমের প্রশংসা করছেন সাধারণ মানুষ, তখনও ছাত্রলীগ নিয়ে সমালোচনায় ব্যস্ত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ফিলিস্তিনের পক্ষে সরাসরি পতাকা হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাস্তায় নামলেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করতে দেখা যায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। গত বছর থেকে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইল হামলা চালানোর পর থেকে বারবার বিষয়টির প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যেও একাধিকবার বিষয়টির সমালোচনা করে ফিলিস্তিনের পক্ষে বাংলাদেশের সংহতি প্রকাশের কথা জানান। কিন্তু এতকিছুর পরও এ বিষয়ে একেবারেই নিশ্চুপ বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো। এমনটি এই দলগুলোর ছাত্র সংগঠন থেকেও ফিলিস্তিনে চলা গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। ফলে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি না জানিয়ে ছাত্রলীগের সমালোচনা করায় আরও একবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলছেন তারেক রহমান ও বিএনপির ইসরাইল সংযোগ নিয়ে।
২০২২-২৩ সালে জুড়ে রাজনীতি পাড়ায় আলোচিত বিষয় ছিলো তারেক রহমানসহ বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির বৈঠক। এ বিষয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সাক্ষাতে মেন্দি এন সাফাদি জানান তারেক রহমানের সঙ্গে তার যোগাযোগের কথা। সেই সঙ্গে তিনি এই সাক্ষাৎকারে বলেন, সরকার বিরোধি জোটের একাধিক নেতাকর্মীরা সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে এবং বিরোধি জোটকে ক্ষমতায় আনতে ইসরাইল কাজ করবে। তিনি আরও জানান এই বিরোধী দলীয় জোট ইসরাইলের পক্ষে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কাজ করবে বলেও কথা হয়েছে।
তৎকালীন সময় এ বিষয়টিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এমনকি তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বিএনপির তৎকালীন কৃষি বিষয়ক সহ-সম্পাদক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল ফারুক ও বিএনপিপন্থী সাংবাদিক মামুন স্ট্যালিনকে নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে মেন্দি এন সাফাদির তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের ভিডিও প্রকাশ্যে এলেও বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপি নেতাকর্মীরা। ২০১৬ সালে নয়াদিল্লিতে সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনের প্রধান মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আসলাম চৌধুরী। এ বিষয় নিয়েও বিএনপির নেতাদের কখনও বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। সবদিক বিবেচনায় আনলে এমনটাই দেখা যায় যে, মেন্দি এন সাফাদি সহ ইসরাইলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর থেকেই বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো সরাসরি ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে কোন কর্মসূচি গ্রহণ করেনি। ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে মাঝে মধ্যে ইসরাইলের পক্ষে দলটির কয়েকজন নেতা বক্তব্য দিলেও দল হিসেবে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সরাসরি এই হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানানো হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জনগণকে একপাশে ঠেলে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের প্রতি অতি নির্ভরতা বিএনপিকে আরও জনবিচ্ছিন্ন করে তুলছে। মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক রেখে চলা দলটি ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিরব থাকায় অন্যান্য ধর্ম ভিত্তিক দলগুলো থেকেও প্রশ্ন উঠছে। তবে এরপরও বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা তারেক রহমানের নির্দেশে ইসরাইল ইস্যুতে বিএনপির অচলবস্থা বলে মনে করেন দলটির অনেক নেতাকর্মী। সিনিয়র নেতৃত্ব সরাসরি বিষয়টি না বললে তেমনটাই নির্দেশনা হিসেবে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর নিজেদের ইসরাইল সংযোগ ও নির্ভরশীলতার বিষয়টি ঢাকতেই ছাত্রলীগের ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সমাবেশ ও কার্যক্রমকে মেনে নিতে পারছেন না দলটির নেতাকর্মীরা।