দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। নেতাকর্মীরা হতাশ। বিএনপির রাজনীতি করতে হলে টাকা ছাড়া কোনো কথা নেই। নির্বাচনে মনোনয়, দলে ছোটখাট পদ বা কমিটিতে ঢুকতেও দিতে হয় বড় অঙ্কের টাকা। বিএনপির রাজনীতি থেকে তাই ত্যাগী, পরীক্ষিতরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। নির্বাচন বর্জন করায় মনোনয়ন বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। তবে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমান সেটা পুষিয়ে নিতে নিত্যনতুন পথ বের করছেন। এবার তার ধান্দায় যুক্ত হলো বহিষ্কার বাণিজ্য।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল সময়ে বিএনপিতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার নেতাকে বিভিন্ন কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে। যাদের অধিকাংশই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বহিষ্কার হন। এদের মধ্যে অন্তত ২ হাজার স্থানীয় নেতা আবার দলে ফিরেছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে দেন-দরবার করে, তারেক রহমানের সাথে সরাসরি কথা বলে, নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা খরচ করে তবেই তারা দলে ফিরতে পেরেছেন। তবে মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান, তৈমুর আলম খন্দকারদের মত সিনিয়র যেসব নেতা তারেককে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, তারা দলে ঠাঁই পাননি। ২০২৪-এর জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি ভেঙে ৩টি নতুন দল গঠিত হয়েছিল। এই দলগুলোর প্রতিষ্ঠাতারা সবাই সাবেক বিএনপি নেতা। তারাও বহিষ্কার হয়েছিলেন কিন্তু টাকা দিয়ে আর ফিরে আসতে রাজি হননি।
জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ নেওয়া অন্তত ৮ জন নেতা অতি সম্প্রতি বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। কিন্তু কীভাবে তারা দলে ফিরেছেন—এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বহিষ্কারাদেশের পর তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দর কষাকষি করে ১০/২০ লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে আবার দলীয় পদ পদবী ফিরে পেয়েছেন। লন্ডনে সেই টাকা পৌঁছানোর পর সেখান থেকে আসা ফিরতি নির্দেশে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়েছে তাদের। তবে বখরা থেকে বঞ্চিত হননি লবিং করা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও। তাদের ভাগ্যেও জুটেছে কিছু।
এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রথম পর্বে দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ৭৩ জনকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু বহিষ্কারাদেশ পেয়েও তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি। এমনকি দ্বিতীয় পর্যায়ের মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও দেখা গেছে, বিএনপির ৫৪ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়েছেন। কেন তারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলেন— এর জবাবে তারা জানান, বহিষ্কারাদেশ নিয়ে তারা আতঙ্কিত নন। নির্বাচনে নামা বিএনপির অনেক প্রার্থীই বলেছেন আগে নির্বাচন হয়ে যাক, তারপর সব ম্যানেজ করা যাবে। প্রয়োজনে লন্ডনে ভেট পাঠাতেও প্রস্তুত তারা।
বিএনপিতে বহিষ্কার রীতি অনেকদিনের। তবে খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর তারেক রহমান নেতৃত্বে এসে নানান অজুহাতে শাস্তির ব্যবস্থা চালু করেন। কিন্তু এখন এটা তার নয়া ধান্দায় পরিণত হয়েছে। যে কাউকে বহিষ্কার করে পরে টাকার বিনিময়ে তাকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। শুধু নির্বাচনী মনোনয়ন নয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য বিভিন্ন সময় যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে লবিং ও দেন-দরবারের পর নির্দিষ্ট অর্থ লন্ডনে পৌঁছে দিয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে তাদেরও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। যা স্বীকার করেছেন বিএনপির অনেক নেতাই।