1. bulletindhaka9@gmail.com : ঢাকা বুলেটিন : ঢাকা বুলেটিন
  2. info@www.dhakabulletin.news : ঢাকা বুলেটিন :
বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ১২:৪৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
শেইনের আইপিও জটিলতা: চীনের গ্লোবাল ব্যবসায় বহির্গমনের চ্যালেঞ্জ মাস্ক নতুন রাজনৈতিক দলের পরিকল্পনা ধীরে নিয়ন্ত্রিত করছেন: WSJ রিপোর্ট জ্যাকসন হলের আগে ফেড সংশ্লিষ্ট বাজারে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি  জাপানের বিশ্বযুদ্ধ জয়জয়ন্তী উপলক্ষে চীনে বিশাল সামরিক বিধান প্রদর্শনী চিন স্থিতিশীল রেখে গেল মূল সুদের হার, পূর্বাভাস মতো সিদ্ধান্ত প্রযুক্তি সেক্টরে বিক্রয়ে বাজারে অসন্তোষের ছায়া ইউক্রেন শান্তি আলোচনার অগ্রগতি দেখার অপেক্ষায় তেলের দাম স্থিতিশীল স্বর্ণের দাম তিন সপ্তাহের নীচে, ডলারের শক্তির প্রভাব ও ফেড সম্মেলনের প্রতি প্রত্যাশা ভোলা ভেলুমিয়া বিজেপির সম্মেলন হানিফ হাওলাদার আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী সদস্য সচিব গহিন অরণ্যে প্রাচীনতম ৩০টিরও বেশি গিরিখাত

ভোলার জমিদারি ঐতিহ্যের সাক্ষী: আব্দুল জব্বার মিয়া জমিদার বাড়ি

মো: সামিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ২১১ বার পড়া হয়েছে

 

ভোলা—বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা। ইলিশের জন্য বিখ্যাত হলেও, এখানকার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে ইতিহাসের নানা অধ্যায়। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক স্থাপনার এক মেলবন্ধন এই ভূখণ্ড। কিন্তু ভোলার ইতিহাসে জমিদারদের অবদান অনেকটাই চাপা পড়ে গেছে কালের আবর্তে। আজ আমরা সেই বিস্মৃতপ্রায় ইতিহাসের এক অনন্য অংশ, জমিদার আব্দুল জব্বার মিয়া বাড়ি, যা স্থানীয়দের কাছে কুতবা মিয়া বাড়ি নামেও পরিচিত, তারই এক স্মৃতিময় ভ্রমণে পা বাড়াবো।

ভ্রমণের শুরু: ইতিহাসের পথে হাঁটা

ভোলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বোরহানউদ্দিন উপজেলা। একসময় এটি কালীগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। এখানেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন জমিদারি ঐতিহ্যের নিদর্শন, ‘আব্দুল জব্বার মিয়া বাড়ি’। মনে হবে, একটি বাড়ি নয়, বরং একেকটি ভবন যেন একেকটি ইতিহাসের শহর! দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই বাড়ি সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দীর পর শতাব্দী।

এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আব্দুল জব্বার চৌধুরী। ১২৫৫ বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহণ করা এই দানশীল ও সমাজসেবী ব্যক্তিত্ব ছিলেন ভোলার অন্যতম প্রভাবশালী জমিদার। তার নাম ছড়িয়ে ছিল পুরো জেলায়। প্রায় চার হাজার একর সম্পত্তির মালিক ছিলেন তিনি। জমিদারি ব্যবস্থার শেষ পর্যায়ে এসে, ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে, তিনি তার জমিদারির সব সম্পত্তি ওয়াকফ করে দেন। ১৩৪১ বঙ্গাব্দে ৯৬ বছর বয়সে তার প্রয়াণ ঘটে।

তার চার ছেলের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ছিলেন মজিবুল হক চৌধুরী, যিনি পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। এছাড়া, তার ছেলে রেজা-এ-করিম চৌধুরী (চুন্নু মিয়া) ছিলেন একজন ভাষাসৈনিক ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এমএলএ।

ঐতিহাসিক স্থাপত্য: সময়ের স্পর্শে অমলিন

এ জমিদার বাড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর স্থাপত্য। প্রায় ২০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই প্রাসাদসম বাড়িটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে তার অতীত ঐশ্বর্যের সাক্ষী হয়ে।

বাড়িতে রয়েছে দুই থেকে তিনতলা বিশিষ্ট ১২টি দালান।

প্রতিটি ভবনের নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ইট, চুন, সুরকি, লোহা ও সেগুন কাঠ।

দরজা-জানালা এখনো চকমকে, বিবর্ণ হয়নি সেগুন কাঠের মজবুত কারুকার্য।

ঘরের মেঝে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পাথর বসিয়ে মোজাইক করা হয়েছে, যা সে সময়ের জন্য এক বিরল স্থাপত্যশৈলী।

প্রতিটি ভবনের দেয়ালের পুরুত্ব ৩০ ইঞ্চির বেশি, যা গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমেও বাড়ির ভেতরটা শীতল রাখে।

সীমানা প্রাচীরের পুরুত্বও প্রায় ৩৫ ইঞ্চি!

জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য: টানা পাখা ও বৈঠকখানা

বাড়ির সামনেই রয়েছে জমিদারি আমলের বৈঠকখানা ও কাচারি ঘর। এখানেই বসতেন জমিদার আব্দুল জব্বার মিয়া, প্রজাদের সঙ্গে কথা বলতেন, তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন। বৈঠকখানায় এখনো দেখা যায় সেকালের বিখ্যাত ‘টানা পাখা’, যা হাতে টেনে বাতাস করা হতো।

বাড়ির পেছনে রয়েছে একটি বিশাল দীঘি। প্রায় শতবর্ষ পুরোনো এই দীঘির টলটলে পানিতে এখনো স্থানীয়রা গোসল করে। জমিদারের পূর্বপুরুষদের সময় এই দীঘি খনন করা হয়েছিল এলাকাবাসীর পানীয় জলের সংকট মেটানোর জন্য।

এক জমিদারি পরিবারের গল্প

এই জমিদার বাড়ির শেকড় গাঁথা রয়েছে ভোলার মাটির গভীরে। আব্দুল জব্বার মিয়ার পূর্বপুরুষরা ছিলেন উত্তর শাহবাজপুরের ধন গাজীর বংশধর। তার সন্তান মন গাজী, এবং মন গাজীর ছেলে বরকত উল্লাহ এসে এখানে বসতি গড়েন। পরবর্তী প্রজন্মের হাত ধরে এই পরিবারই হয়ে ওঠে ভোলার অন্যতম শক্তিশালী জমিদার বংশ।

বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও, এখনো তার উত্তরসূরিরা এই জমিদার বাড়িতে বসবাস করেন। জমিদারি প্রথা না থাকলেও, পরিবারের আতিথেয়তা এখনো অটুট। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা হতে পারে।

কিভাবে যাবেন জমিদার বাড়ি?

যদি ইতিহাসপ্রেমী হন, তবে এই জমিদার বাড়ি ঘুরে না এলে ভোলার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় মিস করবেন। যাওয়ার পথ বেশ সহজ:

১. ভোলা শহর থেকে: প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে বোরহানউদ্দিন যেতে হবে। সেখান থেকে রিকশা বা সিএনজিতে সহজেই জমিদার বাড়ি পৌঁছানো যায়।

২. ঢাকা থেকে: সদরঘাট থেকে লঞ্চে ভোলা আসতে পারেন। এরপর বাসে বোরহানউদ্দিন, সেখান থেকে টেম্পো বা রিকশায় বাড়িতে পৌঁছানো যাবে।

৩. ভোলা সদর থেকে: সরাসরি বাসে বোরহানউদ্দিন যেতে হবে। সেখান থেকে মাত্র ৩-৪ কিলোমিটার দূরে কুতবা মিয়া বাড়ি অবস্থিত।

 

শেষ কথা: ইতিহাসের গন্ধমাখা এক ভ্রমণ

যারা ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্থাপত্য ভালোবাসেন, তাদের জন্য আব্দুল জব্বার মিয়া জমিদার বাড়ি এক দুর্দান্ত গন্তব্য। শত বছর আগের জমিদারি প্রথার চিত্র চোখের সামনে ভেসে উঠবে এই বাড়ির করিডোরে হাঁটলে।

যখন সূর্যের আলো পাথরে মোজাইক করা মেঝেতে প্রতিফলিত হয়, যখন বাতাসে ভেসে আসে শতবর্ষী দীঘির শীতলতা, তখন মনে হয়—সময়ের চাকা যেন এক জায়গায় থমকে দাঁড়িয়েছে। এই জমিদার বাড়ি কেবল ইট, কাঠ, লোহা আর পাথরের মিশ্রণ নয়; এটি ভোলার এক প্রাচীন ইতিহাস, যা কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে।

আপনি কি প্রস্তুত এই জমিদারি অতীতের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ার জন্য?

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট