
ভোলার ১৯ জন জেলে, যারা সাগরে মাছ ধরার সময় ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে আটক হয়েছিলেন, ৯৫ দিন পর মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন। বুধবার বিকেলে মোংলা বন্দরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মাধ্যমে তাদের হস্তান্তর করা হয়, যখন দুই দেশের মধ্যে জেলে বিনিময় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
ভোলা জেলার দক্ষিণ দীঘলদী ইউনিয়নের শান্তিরহাট মাছঘাট থেকে ১৯ জন জেলে গত ৫ সেপ্টেম্বর সাগরে মাছ ধরতে যান। সফিজল মাঝির নেতৃত্বে তারা সুন্দরবন এলাকায় জাল ফেলে প্রায় ৬ লাখ টাকার ইলিশ ধরেন। ১২ সেপ্টেম্বর ফেরার পথে ঝড়ো হাওয়া ও প্রবল স্রোতের কারণে তাদের ট্রলার বিকল হয়ে যায় এবং স্রোতের টানে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করে। সেখানে ভারতীয় কোস্টগার্ড তাদের আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।
কোস্টগার্ড সূত্র জানায়, ১২ ও ১৭ সেপ্টেম্বর ভোলার এই ১৯ জনসহ মোট ৩২ জন বাংলাদেশি জেলেকে জলসীমা অতিক্রমের অভিযোগে আটক করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার ভিত্তিতে জেলে বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার ভারতীয় কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার পর তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হয় এবং সকালে মোংলা বন্দরে পৌঁছান। বুধবার বিকেল সোয়া ৫টায় জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেজবাহুল ইসলামের নেতৃত্বে কোস্টগার্ড সদস্যরা ভারতীয় কোস্টগার্ড থেকে এই ৩২ জনকে গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ভোলার ১৯ জন এবং অপর ১৩ জন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের। একই সঙ্গে বাংলাদেশে আটক ৪৭ জন ভারতীয় জেলেকে ভারতীয় কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ভোলার জেলেরা পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তরিত হয়ে ভোলার উদ্দেশে রওনা হন।
কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম উল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “দুই দেশের সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুসারে কোস্টগার্ডের মাধ্যমে জেলেদের হস্তান্তর করা হয়েছে।”
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান জানান, “সাধারণত এ ধরনের আটক জেলেদের ছাড়িয়ে আনতে দীর্ঘ সময় লাগে, কিন্তু এবার ৩ মাস ৫ দিনের মধ্যে তারা ফিরতে পেরেছেন। এ সময় উপজেলা প্রশাসন থেকে ওই পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।” জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, “১৯ জন জেলের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।” এছাড়া ভোলা জেলা প্রশাসক জেলেদের উদ্ধারে চিঠি পাঠিয়েছেন।
দীর্ঘদিন আটক থাকায় জেলেদের পরিবারগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় এবং অনেকে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটান। স্থানীয় সংগঠনের জেলা সম্পাদক শেখ আল মামুন জানান, “ওই জেলেদের তথ্য সংগ্রহ করে প্রশাসনের সহায়তায় উদ্ধারে কাজ করা হয়েছে।”
ফিরে আসা জেলেরা হলেন: মো. সফিজল বেপারী (মাঝি), মো. শাহ আলম, মো. ছিদু মুন্সি, রাজীব চন্দ্র দাস, ট্রলারচালক মো. আক্তার হোসেন, মো. মিন্টু হাওলাদার, মো. ফরিদ, মো. আলমগীর, মোহাম্মদ ফরিদ, মো. ইউনুস, মো. বাবুল সরদার, মো. নিরব হোসেন, মো. ইসমাইল, মো. শাহ আলম হাওলাদার, গৌতম চন্দ্র দাস, মো. জাকির হোসেন, মো. সগির সিকদার, মো. টুটুল, মো. শহীদুল ইসলাম। তাদের সকলের বাড়ি ভোলা জেলা সদরের দক্ষিণ দীঘলদী ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে।