বেইজিং, ২৩ সেপ্টেম্বর — শিপিং ডেটা অনুযায়ী সোমবার চীনের হাইনান ল্যানজিং টার্মিনালে রুশ আরকটিক এলএনজি-২ প্রকল্পের ষষ্ঠ কার্গো এসে পৌঁছেছে; যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মস্কা-বেইজিং জ্বালানি বাণিজ্য নতুন মাত্রা পাচ্ছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন।
নৌ-ট্র্যাকিং সার্ভিস ক্লার্কসনসের তথ্য অনুযায়ী, ১৭২,০০০ ঘনমিটার ধারণক্ষমতার এলএনজি ট্যাংকার “জিওলন” সোমবার সকালে হাইনান বন্দরের সাইপিং টার্মিনালে নোঙর করে। জাহাজটি নরওয়ের মারঘেরিতা নাভা নামে একটি স্থানীয় ব্রোকারের মাধ্যমে পতাকা বদলে কমোরোস রেজিস্ট্রি ব্যবহার করছিল; এর আগে গত ১০ জুলাই থেকে পাঁচটি একই রুটের চালান চীনে এসেছে। আরকটিক এলএনজি-২-এর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৯.৮ মিলিয়ন টন বার্ষিক; এর ৬০ শতাংশ রফতানির জন্য চুক্তিবদ্ধ, যার মধ্যে চীনা সিনোপেক ও চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (CNPC) দু’টি দীর্ঘমেয়াদি এসপিএ-র আওতায় বার্ষিক ৪ মিলিয়ন টন করে নেওয়ার কথা রয়েছে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ আরকটিক এলএনজি-২-এর মালিকানা কোম্পানি নোভাটেক এবং এর শিপিং ও বীমা সহায়তাকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত জুনে একই প্রকল্পে জড়িত কোনো জাহাজ ইউরোপীয় বন্দরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, বেইজিং “একপক্ষীয় নিষেধাজ্ঞা মানে না” এবং “স্বাভাবিক জ্বালানি ক্রয়-বিক্রয়” অব্যাহত থাকবে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, “চীন-রাশিয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা আন্তর্জাতিক আইন ও নিজস্ব স্বার্থের ভিত্তিতে হয়; তৃতীয় পক্ষের নিষেধাজ্ঞা অনুসরণের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।”
এলএনজি ট্যাংকার “জিওলন”-এর বর্তমান মালিকানা ডেটা অনুসারে জাহাজটি গ্রিক শিপিং কোম্পানি কাপ্টেন গ্যাস লিমিটেডের মাধ্যমে পরিচালিত হলেও বীমা ও পতাকা রাষ্ট্রের তথ্য গোপন রাখায় “ছায়া ফ্লিট”-এর অন্তর্ভুক্ত বলে জ্বালানি বিশ্লেষক সংস্থা ভর্টেক্সা জানিয়েছে। ইউরোপীয় কূটনীতিক সূত্র বলছে, নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রুশ কার্গোর জন্য এশিয়ান পতাকা ও হংকং-ভিত্তিক বীমা ব্যবহার বেড়েছে; এতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার দক্ষতা কমছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, চীনা আমদানিকারকরা রুশ এলএনজি-তে প্রায় ১৫–২০ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন; শীতকালীন চাহিদা বাড়ার আগেই স্টক গড়তে টার্মিনাল ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। রফতানি আয় বৃদ্ধির ফলে মস্কা ২০২৫ সালে এলএনজি বিক্রি থেকে প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে বলে ট্রেড ম্যাপের হিসাব। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি এক বিবৃতিতে বলেছে, “নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর যেকোনো প্রচেষ্টা আমরা শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।”
আগামী সপ্তাহে শাংহাই-তে রুশ-চীন জ্বালানি ফোরাম; সেখানে আরকটিক এলএনজি-২-এর তৃতীয় ট্রেনের অতিরিক্ত ৬.৬ মিলিয়ন টন উৎপাদন বাড়াতে নতুন অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে বলে দু’পক্ষের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন। চীনা কাস্টমস ডেটা অনুযায়ী, ২০২৫-এর প্রথম আট মাসে চীন মোট ২৮ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করেছে, যার ২২ শতাংশ রুশ উৎস—এর পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি।