কুয়াকাটার সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদার ক্ষমতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দলও বদলিয়ে আলোচনায় এসেছেন। জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতার আশীর্বাদে রাজনীতিতে প্রবেশ থেকে ২০২৩ সালে চমকপ্রদভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া পর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক জীবন বিতর্ক ও অভিযোগে পরিপূর্ণ।
আনোয়ার হাওলাদারের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল পোনা মাছ ধরার ছোট শ্রমিক জীবনে। কঠোর পরিশ্রম ও হকারি ব্যবসায় জড়িয়ে তিনি ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করেন। জাতীয় পার্টির এক শীর্ষ নেতার আশীর্বাদে রাজনীতিতে প্রবেশ করে মহিপুর থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি হিসেবে ক্ষমতায় উঠে প্রতিষ্ঠিত হন।
২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর কুয়াকাটা পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক অর্থ খরচ করে মেয়র পদ দখল করেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তাঁর অর্থ ও প্রভাব চোখে পড়ে। এরপর ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে ফুলের তোড়া দিয়ে চমকপ্রদভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
তখন তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কুয়াকাটার উন্নয়নের অঙ্গীকার করলেও, আওয়ামী লীগে যোগদানের পর থেকে নানা দুর্নীতি, লুটপাট, দখল ও সালিশবাণিজ্যসহ গরিব-অসহায়দের হয়রানির অভিযোগের মুখে পড়েন।
ইজারার নামে পৌরসভার বাজারগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে টেন্ডার বাণিজ্যে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের তীব্র অভিযোগও রয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের আগে তিনি ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র মহড়া দেন ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। এরপর সাধারণ মানুষের উপর হামলা, দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তাঁর নাম ওঠে। এই ঘটনাগুলোর ভিডিও ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
অপরদিকে, তিনি বিএনপি ও কুয়াকাটা পৌর বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ শনিবার (৯ আগস্ট) ঢাকার গুলশানে জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে আনোয়ার হাওলাদারের উপস্থিতি নতুন করে দলবদলের গুঞ্জন ছড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতার দিক বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে আনোয়ারের রাজনৈতিক ধারা ও দলের দিকও পরিবর্তিত হচ্ছে।
আনোয়ার হাওলাদারের এই দ্বৈত চরিত্র এবং দলবদল কুয়াকাটার রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন বিতর্ক ও আলোচনা সৃষ্টি করেছে।