
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগা ফেরিঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স দাস অ্যান্ড ব্রাদার্সের ইজারা বাতিল করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। গত ২৪ জুলাই ইজারাদার শিবু লাল দাসের কাছ থেকে ঘাটের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বুঝে নেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই ফেরিঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন পারাপার হয়। তবে, দীর্ঘদিন ধরে ইজারাদারের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্থ আদায়ের অভিযোগ ছিল। সরকারি ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, দুই চাকার যানবাহনের জন্য ৫ টাকা নির্ধারিত থাকলেও আদায় করা হতো ১০-১৫ টাকা। অটোরিকশার জন্য ১০ টাকার পরিবর্তে ৪০-৫০ টাকা, প্রাইভেটকারের জন্য ১৫ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা, মাইক্রোবাসের জন্য ২৫ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, বাসের জন্য ৪৫ টাকার পরিবর্তে ২৫০ টাকা এবং মিনিবাসের জন্য ২৫ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা আদায় করা হতো। ভারী ট্রাকের ক্ষেত্রে ১০০ টাকার সরকারি ভাড়ার বিপরীতে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হতো।
এনসিপি যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা জাকির হোসেন বলেন, “বছরের পর বছর ধরে এই ইজারাদার সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম করে আসছিলেন। আমি প্রথমে মৌখিকভাবে অভিযোগ করলেও কোনো ফল পাইনি। পরে লিখিত অভিযোগ দিই। তদন্ত কমিটি গঠনের পর অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয় এবং ইজারা বাতিল করা হয়।”
পটুয়াখালী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জামিল আক্তার লিমন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, ইজারাদার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা আদায় করছিলেন। এরপর তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।”
অন্যদিকে, অভিযুক্ত ইজারাদার শিবু লাল দাস দাবি করেছেন, তার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি ৬ কোটি টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সবই নিয়েছি। এটা আমার সঙ্গে অন্যায়। আমি হাইকোর্টে আবেদন করেছি এবং বিশ্বাস করি, ইজারা ফিরে পাব।” অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “আগে যেভাবে ভাড়া নেওয়া হতো, এখনো সেভাবেই নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।”
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বগা ফেরিঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ফলে যাত্রী ও যানবাহন চালকদের দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছিল। ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অনেকে স্বাগত জানালেও, তারা প্রশাসনের কাছে ঘাটের ভাড়া ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারি এবং ন্যায্য ভাড়া নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
সচেতন মহলের মতে, এই পদক্ষেপ অন্যান্য ফেরিঘাটে অনুরূপ অনিয়ম রোধে একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে। তবে, ইজারাদারের আইনি পদক্ষেপ এবং আদালতের সিদ্ধান্ত এই ঘটনার পরবর্তী গতিপথ নির্ধারণ করবে।