
নওগাঁ-১ আসনের রাজনীতি সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় এসেছে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়নকে কেন্দ্র করে। এই আসনটি ঐতিহ্যগতভাবে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়, যেখানে নেতা–কর্মীদের মধ্যে মতাদর্শিক অঙ্গীকার, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও ব্যক্তিগত প্রভাব—সবকিছুই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু দলীয় প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত একটি বিক্ষোভমুখর মশাল মিছিলে রূপ নেয়।বিএনপির কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত প্রাথমিক মনোনয়নকে কেন্দ্র করে নিয়ামতপুর উপজেলার বহু নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ—প্রাথমিক মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে তৃণমূল নেতাদের মতামত যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি। স্থানীয় নেতা–কর্মীদের দাবি অনুযায়ী, যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী দলীয়ভাবে কার্যকর, নিবেদিত এবং দীর্ঘদিন মাঠে–ময়দানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন—তাঁরাই মনোনয়নে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা ছিল।
মনোনয়ন প্রক্রিয়ার প্রতি এই অসন্তোষ ধীরে ধীরে সংগঠিত ক্ষোভে পরিণত হয় এবং ফলশ্রুতিতে প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা আসে।এই প্রতিবাদসমূহের নেতৃত্বে ছিলেন নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ আইনুল রহমান—একজন দীর্ঘদিনের সংগঠক, যার নেতৃত্বে বহু রাজনৈতিক কর্মসূচি অতীতে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৃণমূলে তার গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাবই নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্রুত সাড়া জাগায়।ডাঃ আইনুল রহমানের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা মোঃ মাহমুদুস সালেহীনের পক্ষে সরব প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। সালেহীনকে তাঁরা এই আসনে যোগ্য, জনপ্রিয় এবং তৃণমূলনির্ভর প্রার্থী হিসেবে দেখেন। তাদের দাবি ছিল—দলের প্রকৃত পরিশ্রমী ও বঞ্চিত নেতাদের ন্যায়সঙ্গত মূল্যায়ন করতে হবে।রাতের অন্ধকার ভেদ করে জ্বলে ওঠা মশাল ছিল শুধু আলো নয়—বরং ক্ষোভ, বঞ্চনা ও প্রতিরোধের প্রতীক। মিছিলটি নিয়ামতপুর উপজেলা সদর থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। অংশগ্রহণকারীরা হাতে হাতে জ্বলন্ত মশাল নিয়ে দলীয় স্লোগান দেন—মনোনয়ন বাতিল, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা ও নেতৃত্বের মূল্যায়নের দাবিতে।
মিছিল অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার মানুষজন ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দৃশ্যটি দেখেন। অনেকে ভিডিও করেন, কেউ কেউ সমর্থনের স্লোগানও দেন। একসময় মিছিলটি একটি মানবসমাবেশে পরিণত হয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ ছিল—প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নেই,তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে,স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়নি,সিদ্ধান্তের ফলে দলের ভিতরে বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে।তারা দাবি করেন, মোঃ মাহমুদুস সালেহীন নওগাঁ-১ আসনের রাজনৈতিক বাস্তবতায় একজন সক্রিয়, পরিচ্ছন্ন ও গ্রহণযোগ্য নেতা। মাঠপর্যায়ে তাঁর জনপ্রিয়তা, ত্যাগ ও রাজনৈতিক অবদান যথেষ্ট, যা উপেক্ষা করা হয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস।মিছিলে দেওয়া বক্তব্যে ডাঃ আইনুল রহমান বলেন,“দল যদি তৃণমূলের আওয়াজ না শুনে, তাহলে দলের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাবে। প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিল করে যোগ্য প্রার্থীকে মূল্যায়ন করা হোক—এটাই আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি।মশাল মিছিলের ঘটনাটি স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করে। অনেকেই মনে করেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের অংশগ্রহণ বাড়ানো না হলে দল সাংগঠনিক সংকটে পড়তে পারে। আবার কেউ কেউ এটিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চাপ তৈরির ইতিবাচক মাধ্যম হিসেবে দেখছেন।এই কর্মসূচি শুধু মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়—এটি একটি বার্তা: দলের মর্যাদা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।